ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলার আসামীরা প্রকাশ্যে জনতার বাজার চালাচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পশুরহাট বসানো এবং দায়িত্ব পালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও আসামীদের রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে পুলিশের উপস্থিতিতেই আসামীরা বাজার পরিচালনা করছেন। প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মামলার এজাহারে জানা যায়, গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজার পশুরহাটটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এবং এটি কোনো অনুমোদিত হাট নয়। দীর্ঘদিন ধরে একটি কমিটি এ হাটটি পরিচালনা করে আসছে। জেলা প্রশাসনের একাধিক নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা সত্ত্বেও বাজার কমিটি হাট বন্ধ করেনি। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মহাসড়কে যানজট নিরসনে জনতার বাজারে হাট না বসানোর জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু জনতার বাজার কমিটি সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার, পোস্ট, কমেন্ট ও রাতভর হাট বসানোর ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করে। ৩১ মে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রায় ৭০ জন পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্য নিয়ে সরেজমিনে জনতার বাজার পশুরহাট এলাকায় অভিযান চালান। অভিযানের সময় বেলা ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে হাট কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে বেআইনিভাবে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন। অভিযুক্তরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অপমানজনক আচরণ ও শারীরিক হামলা চালায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একজনকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে। পরে পুলিশের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিরাপদে স্থান ত্যাগ করেন। এরপরও পুরো দিন ধরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাজারে গরু কেনাবেচা চলতে থাকে। এ সময় হাট পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রশাসনের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার মাধ্যমে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করে। এ ঘটনায় ১ জুন পানিউমদা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন-গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মামদপুরের বাসিন্দা আবুল খায়ের গোলাপ, আজির উদ্দিন, কাজী তোফায়েল আহমদ, কাউছার আহমেদ তালুকদার, কাজী জাহিদ আহমেদ, গোলাম মতুর্জা স্বপন, মো: নজর উদ্দিন, আব্বাস উদ্দিন, মো: জামাল মিয়া, আঃ শহীদ, আঃ হাই, আবুল কালাম, সুমন মিয়া, আঃ আউয়াল, হারিছ মিয়া, রিফন মিয়া, কাজী রিফন, আঃ বাছিত, লুৎফুর রহমান, আফজল মিয়া, সুয়েল মিয়া, জিতু মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, মোঃ রাসেল মিয়া, মিজান মিয়া, খাইরুল মিয়া, সায়েক মিয়া, মোস্তাকিন মিয়া, আশ্বব আলী, ফয়েজ মিয়া, রাবেল মিয়া, সুফায়েল মিয়া, অলিউর রহমান ওরফে অলি মিয়া। তাদের সকলের বাড়ি দক্ষিণ গজনাইপুরে। এছাড়া সাতাইহালের উমর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককেই আসামীভূক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মামলা দায়েরের পর গত শনিবার ১৪ জুন পুলিশের উপস্থিতিতে আসামীরা আবারও বাজার বসায়। কিন্তু পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার না করায় প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে আসামীরা বলছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা এই বাজার বাসাচ্ছেন। এছাড়াও বাজার কমিটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে গজনাইপুর গ্রামের বাসিন্দা মঈন উদ্দিন জানান, শনিবার পুলিশের উপস্থিতিতে আসামীরা বাজার পরিচালনা করেছেন এবং আগের মতোই বাজার পরিচালনা কমিটি হাসিল আদায় করেছেন। বাজার পরিচালনা কমিটি প্রচারণা করছেন নিয়মিত বাজার বসাবেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা শ্রীঘই আমাদের কাছে ক্ষমা না চাইতে হবে। এমন পরিস্থিতি আমরা তৈরী করে রেখেছি। পুলিশকে বশীভূত করেছি। তারা কোন আসামীকে গ্রেফতার করবে না। তাছাড়া পুলিশের সাথে আমাদের কোন দ্বন্দ্ব নেই। প্রশাসন আমাদের ক্ষতি করেছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। অভিযোগ রয়েছে এসআই স্বাধীনসহ পুলিশের উপস্থিতিতে বাজার পরিচালনা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানাতে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর নাম্বারে ফোন দিলে ওসি তদন্ত ফোন রিসিভ করে বলেন অফিসার ইনচার্জ অসুস্থ। জনতার বাজারের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই স্বাধীন। এসআই স্বাধীনের উপস্থিতিতে গরু বাজার বসানো হয়েছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন-এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে অভিযুক্তদের ধরতে আমরা তৎপর রয়েছি।
এ ব্যাপারে এসআই স্বাধীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- মামলার আসামীদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলছে। আমি ছুটিতে রয়েছি। শনিবার আমি বাজারে ছিলাম না।