বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার খুৎবায় মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার খুৎবায় মুফতি মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। (সূরা নিসা, আয়াত: ৩৬)
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করে কিছু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এ দায়িত্বের কারণেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। মানুষের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ১. হাক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হক ও প্রাপ্য। ২. হাক্কুল ইবাদ তথা মানুষের হক ও প্রাপ্য। মানুষের হক ও প্রাপ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি হাদিসে মুবারাকা’হ উল্লেখ করেন, হযরত আবু সিরমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, যে লোক অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ তা’আলা তার ক্ষতিসাধন করেন। যে লোক অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তা’আলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন। (তিরমিজী)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোন মুসলিম তার কোন বিবস্ত্র মুসলিম ভাইকে কাপড় পরিধান করালে আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের সবুজ পোষাক পরিধান করাবেন। কোন মুসলিম তার ক্ষুধার্ত মুসলিম ভাইকে খাবার খাওয়ালে আল্লাহ তা’আলা তাকেও জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। কোন মুসলিম তার কোন তৃষ্ণার্ত মুসলিম ভাইকে পানি পান করালে আল্লাহ তা’আলা তাকেও মোহরাঙ্কিত স্বর্গীয় সুধা পান করবেন। (আবু দাউদ)
হযরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে লোক তিনটি বিষয়ে অর্থাৎ অহংকার, খিয়ানত ও ঋণ হতে মুক্ত অবস্থায় মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজী)
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হক তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)
হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে সরাতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে। (তিরমিজী)
পরিশেষে তিনি বলেন, মানুষের অধিকার হলো, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসা, সবার সেবা করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা। পরিবার, সমাজ ও মানবসেবাও হলো হাক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক।