নুর উদ্দিন সুমন ॥ সদ্যগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ৯ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথ গ্রহণ শেষে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের জারি করা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সদস্য মনোনীত হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান। তিনি রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করলেও পৈতৃক নিবাস চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি গ্রামের হাবিলীতে। তার পিতা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসান। মা সুরাইয়া হাসান। বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট। পরবর্তীতে সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ সন্তানের জননী। মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান। রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন। রিজওয়ানা হাসানের আপন চাচাত ভাই চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ লিয়াকত হাসান। সৈয়দ লিয়াকত হাসান বলেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আমার ছোট বোন। আমার মরহুম চাচা সৈয়দ মহিবুল হাসান একসময় শ্রম মন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশের সেবা করে গেছেন। আমরা কখনোই ভাবিনি আমাদের পরিবারে মহান মন্ত্রীর দায়িত্ব ফিরে আসবে। পরিবেশ রক্ষায় আমার বোন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, কঠোর পরিশ্রমি আমার বোনকে নিয়ে আমি গর্বিত। আমি আশা করি আমার ছোট বোন রিজওয়ানা হাসান আমার চাচা সৈয়দ মহিবুল হাসানের আদর্শ অনুসরণ করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। চুনারুঘাট সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: কাউছার আহমেদ বাহার বলেন, সবকিছুই স্বপ্নের মতো। মন্ত্রীর ঘরে মন্ত্রী হবে আমরা কল্পনাই করতে পারিনি। আমাদের এলাকার সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসান চাচা খুবই সহজ সরল মানবিক মানুষ ছিলেন। তার মেয়ে রিজওয়ানা আপাও ভাল মনের মানুষ। ভাল মানুষের দাম সব জায়গায়ই আছে। মন্ত্রীত্বই তার প্রমাণ। চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মীর সিরাজ বলেন, মন্ত্রীর মেয়ে মন্ত্রী আসলেই গড গিফট।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ পুরস্কার-এ ভূষিত হন। তার পরিচালিত সংগঠন বেলা ২০০৩ খিস্টাব্দে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম ঘোষিত গ্লোবাল ৫০০ রোল অফ অনার্স পুরস্কারে ভূষিত হয়। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পেয়েছেন পরিবেশের নোবেল খ্যাত গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ। তার এসব নানামুখি কর্মকান্ডের কারণেই ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাকে হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস এ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ প্রদত্ত সিলেব্রেটিং ওমেনহুড এওয়ার্ড প্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাঁচজন নারীর একজন। এছাড়াও তিনি ২০১২ সালে এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচ্য ফিলিপাইনভিত্তিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান। গত ২০ বছর ধরে যুগান্তকারী আইনি মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিশীলতা পরিবর্তন করে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের ওপর জনকেন্দ্রিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। জনস্বার্থ আইন সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে বন উজাড়, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ভাঙা এবং অবৈধ ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন এবং জিতেছেন। ২০০৯ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন এনভায়রমেন্টার হিরোর একজন হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১২ সালে র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। শক্তিশালী মহলের প্রতিরোধ ও নিজের এবং পরিবারের প্রতি সহিংসতার হুমকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।