মির্জা ফখরুলের প্রশ্ন বেনজীর কীভাবে সিঙ্গাপুরে গেলেন ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন বেনজীর দেশত্যাগ করেছেন কি না, আমি এখনও সঠিক জানি না
স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এর অর্থ ও সম্পদের পাহাড় নিয়ে এখন দেশজুড়ে চলছে আলোচনা। সর্বশেষ গুঞ্জন উঠেছে তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। বলা হচ্ছে গত ৪ মে পরিবারসহ সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান। তাঁর অবস্থান নিয়ে তার ঘনিষ্ঠদের অনেকে বলছেন, তিনি সিঙ্গাপুর আছেন। আবার অনেকে বলছেন তিনি দুবাইয়ে রয়েছেন।
বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, গত ৪ মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের একটি ফ্লাইটে তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান তিনি। স্ত্রী জীশান মির্জার চিকিৎসাজনিত কারণে তারা সে দেশেই অবস্থান করছেন। বেনজীর আহমেদ কারও ফোনও ধরছেন না।
এদিকে সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও তিন মেয়েকে তলব করেছে দুদক। গত মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের তলবি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে, আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদকে এবং ৯ জুন তার স্ত্রী জীশান মির্জাসহ সন্তানদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়।
এদিকে, বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকার পরও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দেশ ছাড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই ঘটনা ‘অন্যায়কারীদের ছাড় দেওয়া হবে না’ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন বক্তব্যকে নিছক লোকদেখানো ও প্রতারণা বলে প্রমাণ করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় শনিবার (১ জুন) মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি একটি গণমাধ্যমে দেখলাম, বেনজীর (সাবেক আইজিপি) ও তার পরিবার ৪ মে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি তার সব ব্যাংক হিসাব খালি করে প্রায় ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। টাকার পরিমাণ আরও বেশি কি-না জানি না।’ বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন? সুতরাং তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য আদালতের আদেশ এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা দায়েরের পদক্ষেপের তাৎপর্য কী? যখন তাকে বলা হলো তাকে কোথাও যেতে দেওয়া হবে না, তখন তিনি কীভাবে সিঙ্গাপুর গেলেন?’
অপরদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশত্যাগ করেছেন কি না, আমি এখনও সঠিক জানি না। আমাকে জেনে কথাটা বলতে হবে। শনিবার (১ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু শীর্ষক’ বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় বাহিনী বা প্রতিষ্ঠান নেবে না বলেও এসময় জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী অনেক ভালো কাজ করেছে। পুলিশ বাহিনী অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে এবং করোনাকালে জীবন উৎসর্গ করে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা জীবন উৎসর্গ দিয়ে কাজ করছেন। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কিছু (অপরাধ-দুর্নীতি) করে থাকে এর দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি-অপরাধ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি অন্যায়ভাবে ধন-সম্পদ করে থাকেন, যে বিধান রয়েছে সেই অনুযায়ী তার বিচার হবে।