কৈলাশে ফিরলেন দেবী
স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাত ৭টা থেকেই রাস্তার পাশে নারী ও শিশুদের জটলা। যে নারী ঘরের বাহিরে তেমন একটা বের হন না, তিনিও আজ এসেছেন রাস্তার পাশে। উদ্দেশ্য একটাই প্রতিমা বিসর্জনের আগে যে আনন্দ উল্লাস তা নিজ চোখে দেখা। নিজেও সে আনন্দে শরীক হওয়া। গতকাল মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জ শহরে রাস্তার পাশে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। ঢাকের তাল, উলুধ্বনি আর ধূপের গন্ধ। ট্রাক ও পিকআপে প্রতিমা নিয়ে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ করে বেড়ায় পূজারীরা। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমস্ত অশুভ শক্তি নাশ করে ঘোড়ায় চেপে কৈলাশে ফিরলেন দেবী।
ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল তার সাঙ্গ হলো গতকাল মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা সম্পন্নের পর মর্ত্য ছেড়ে নিজ আলয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে ভিড় করেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। নানা ধর্ম, শ্রেণি, পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হয়। ২০ অক্টোবর চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। পরবর্তী ৪ দিন পূজামন্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনায় ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এরপর মনের কলুসতাকে ঝেড়ে ফেলে আগামীর পৃথিবী হবে সম্প্রীতির ও সুন্দর এই প্রার্থনায় আগামী বছরের অপেক্ষায় দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান পূজারীরা।
শাস্ত্রমতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে, আর ফিরেছেনও ঘোড়ায় চড়ে।
বিজয়া দশমীর সকালে অঞ্জলির পর থেকে শহরের বিভিন্ন মন্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাতে ট্রাক ও পিকআপে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় খোয়াই নদীর ঘাটলাসহ বিভিন্ন স্থানে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও উৎসব দেখতে ভিড় করেন। শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয় বিসর্জন প্রাঙ্গণ। ঢাকের বাদ্য আর কাঁসার ঘণ্টায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিসর্জন ঘাট ও আশপাশের এলাকা। পান-সিদুঁর আর মিষ্টিমুখ করিয়ে চারদিনের আনন্দ শেষে অশ্রুজলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিদায় দেন দেবীকে।