অদৃশ্য করোনাভাইরাসের ভয়ে বিশ্ববাসী আতংকীত । জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী, গরীব নির্বিশেষে মানুষ ঘরবন্দি অবস্হায় কর্মহীন । এতে গণমানুষের জীবনে নেমে এসেছে কারো পৌষ মাস – কারো সর্বনাশ অবস্হা । গ্রামবাংলায় বহুল কথিত এই প্রবাদটির অর্ন্তনিহিত অর্থ সম্ভবত একই সময়ে, একই পরিস্হিতিতে অনেকের জীবনে আসে সূখ, আনন্দ ও উল্লাস । আবার কারো জীবনে আসে দূঃখ, দূর্দশা, অভাব-অনটন, হতাশা ও বিষাদ । উদাহরণ হিসাবে ধরে নেওয়া যায় পৌষ মাসে গ্রামবাংলার মানুষ থাকে পিঠা পার্বর্ণের অপেক্ষায় । আবার গরীব অসহায় মানুষ থাকে পৌষ মাসের ঠান্ডায় শীতবস্ত্রের অভাবে আতঙ্কিত । অন্যদিকে পৌষ মাস বা মাঘে-মেঘের মিলনে গ্রামবাংলার মানুষ মেতে উঠে আনন্দে । কিন্তু অসময়ে বর্ষনের ফলে জমির ফসলের ক্ষতি হওয়ার আসঙ্কায় কৃষকের মনে জাগে অনিশ্চয়তার আতঙ্ক । এসব কারনেই হয়তো বা প্রবীন মানব হিতৈশী মনিষীগণ “ কারো পৌষ মাস- কারো সর্বনাশ “ প্রবাদটির প্রচলন করেছিলেন ।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো করোনাভাইরাসে সাড়া বিশ্বে সকল শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছেন । ছোট, মাঝারী, বড় ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান সহ বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে । কারো কোন রুজি রুজগার নেই । সবাই বেকার জীবন যাপনে হতাশাগ্রস্ত । তবে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম সমূহে প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে পঁচিশ জন বিলোনিয়ারের সম্পদ ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ বেড়েছে । প্রশ্ন জাগে এটা কি ভাবে সম্ভব হলো এবং কে এই সম্পশালীগণ । পাঠকের জানার প্রয়োজনে দুই/এক জনের নাম বলা যেতে পারে । তাদের মাঝে অন্যতম হলো অ্যামাজোনের সিইও জেফ বেজোসের সম্পদ লকডাউনের দুই মাসে ২৯.৯ বিলিয়ন থেকে ১৪৬.৯ বিলিয়ন ডলার , সফ্টওয়্যারের স্রষ্ঠা বিল গেটের সম্পদ ১১.৯ বিলিয়ন থেকে ১০৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং ফেইসবুক, ওটাসঅ্যাপ, ইনষ্ট্রাগ্রামের স্রষ্ঠা জ্যুকারবার্গের সম্পদ ৩১.৪ বিলিয়ন থেকে ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে । আনুপাতিকহারে আরো ২৩ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ এভাবেই বেড়েছে । ওরা কেহই করোনাভাইরাসে সংক্রামীত হয়নি বা মারা যায়নি । অথচ করোনাভাইরাস সংক্রমনে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ছোট, বড়, মাঝারী ব্যাবসায়ী ও শ্রমজিবী মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে । বিশ্বব্যাপী প্রায় চার লক্ষ মানুষের প্রাণহানী হয়েছে । মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে । কখন এই মৃত্যুর মিছিল থামবে তা কেউ জানেনা । তাদের স্বজনদের নিরব কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে আসছে । লক্ষ কোটি আবাল বৃদ্ধ বনিতা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলেছেন । নিউক্লিয়ার ও রাসায়নিক মারনাস্ত্র আবিষ্কার করতে পারলেও বিশ্বের পরাশক্তি দেশ সমূহ এখনো বিজ্ঞানশাস্ত্র মোতাবেক কোন কার্য্যকর প্রতিষেধক ঔষধ বা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে পারেনি । বিশ্ব স্ব্যাস্হ্য সংস্হার ঘোষনা অনুযায়ী করোনাভাইরাস কখনো নির্মূল হবে না । তার অর্থ হলো মানব জাতি করোনাভাইরাসের কাছে অসহায় । সরকার প্রধানদের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে ধর্ম বিশ্বাসীগণকে সম্মিলিত ভাবে প্রার্থনা করার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে । সে জন্যেই সকল ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সাইনগসমূহ বন্ধ রাখা হয়েছে । অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার কাছে সম্মিলিত ভাবে প্রার্থনা না করার জন্য বিধিনিষধ আরোপ করা হয়েছে । বিনা চিকিৎসায় সাধারন মানুষকে যম দূতের সাথে অর্নিদৃষ্টকালের জন্য লড়াই করে যেতে হবে ।
উল্লেখ্য যে ১৯৮১ ইং সাল থেকে মরনব্যাধি করোনাভাইরাস সদূর চীনের উহান শহর থেকে শুরু হবে বলে বিশ্বের খ্যাতনামা Author Dean Koontz তার লিখা “ The Eyes of Darkness “ উপন্যাস এবং প্রখ্যাত কন্সপাইরিসি থিওরিষ্ট ডেভিড আইক বই লিখে, টক শো’তে ও ইন্টারভিউতে বার বার উল্লেখ করেছেন । এমন কি ২০১১ সালে হলিউড থেকে “ Contagious “ নামে সূদীর্ঘ ফিল্ম করে বিশ্ববাসীকে এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে । কিন্তু পরাশক্তি দেশ সমূহ তা আমলে নেয়নি । ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন চীনের উহান শহর থেকে সত্যি সত্যিই করোনা ভাইরাসের প্রার্দূভাব শুরু হয় তখন বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও কন্সপাইরিসি থিওরিষ্টগণ  ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বা লেখনীর মাধ্যমে করোনাভাইরাস মানুষ্য সৃষ্টি বলে দাবী করেন । তারা করোনাভাইরাসের উৎপত্তির মূল কারন হিসাবে ৫-জি মোবাইল ফোন কে দায়ীত্ব করেন । তার পরপরই সংক্ষুব্দ মানুষ বিলাত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে ৫জি টাওয়ার ধ্বংস করতে উদ্ধত হয় । পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন সরকার কন্সপাইরিসি থিওরিষ্টদের সকল টকশোর অডিও/ভিডিও রেকর্ড গণমাধ্যমে প্রচার না করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় । বাতিল করা হয় সকল ভিডিও রেকর্ড সমূহ ।
বিশ্বব্যাপী বর্তমানে যে স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করা হয় তা হলো 4G ফোন । এই ফোন কোম্পানীর এক সাবেক Chief Executive করোনাভাইরাস outburst হওয়ার পরপরই একটি অডিও ক্যাসেট প্রকাশ করে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে দেন । তার পরিস্কার অভিমত ছিল যে সুর্নিদ্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই নাকি চীন থেকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস সৃষ্টি করা হয়েছে । তার মতে বিশ্বের ধনকুবরগণ মনে করেন পশ্চিমা বিশ্বে যে সকল সত্তর উর্দ্ধ বয়স্ক মানুষ রয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রকে দেওয়ার আর কিছু অবশিষ্ট নেই । বরং সত্তরোর্ধ বয়স্করা রাষ্ট্রের জন্য বোঝা বা Liability. তাদের সেবা স্বশ্রুসার জন্য তথা বসবাসের ঘর, অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা ও পেনশনের জন্য বিলিয়ন্স অব ডলার খরচ করতে হয় । বয়োবৃদ্ধরা চলে গেলে তাদের সঞ্চয়লব্দ পেনশনের টাকা পরিশোধ করার প্রয়োজন হবেনা । বরং রাষ্ট্রের ব্যায়ভার লাঘব হবে । এতে রাষ্ট্র উপকৃত হবে । সে জন্যই বয়স্কদের জন্য তৈরী কেয়ার হোমসে মৃত্যুর সংখ্যা বেশী বলে গণমাধ্যমদাবী করা হয় ।
দ্বিতীয় এজেন্ডা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনীতি চালু করা । তাহলো ইলেক্ট্রনিক অর্থনীতি । AI অর্থাৎ আর্টিফিসিয়েল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে গণমানুষ ও তাদের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করা । একথা সত্য যে বিশ্বের প্রতিটি সরকার ও ধনকুবরেরা তাদের নাগরীকগণের অজান্তেই তাদেরকে আর্টিফিসিয়েল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করে থাকে । AI হলো মোবাইল ফোন, ব্যাংককার্ড, ক্রেডিট কার্ড, পাসর্পোট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার কার্ড, নাগরীক কার্ড বা স্মার্ট কার্ডের চীপ্স ।
5G টেকনোলজি নাকি 4G থেকে দশ ভাগ বেশী গতি ও ক্ষমতা সম্পন্ন । এটাকে অনেক টেকনোলজিষ্টগণ Deadly Weapon বা মারাত্মক মারনাস্ত্রের সাথে তুলনা করে থাকেন । ৫-জির রেডিয়েশন শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ইনহেইল করার পর নাকি মানব দেহের ভিতরের সেল বিষাক্ত বা পয়জনাস করে ফেলে । যা মানবদেহের বিভিন্ন অরগান নষ্ট করে ফেলে । তখন মানবদেহ এই পচা বিষাক্ত ট্রক্সিট নাক বা মূখ দিয়ে বেরিয়ে আসে । এই বিষাক্ত ট্রক্সিকেটেট তরল সর্দ্দি বা কপই নাকি ভাইরাস যা অন্যকে সংক্রামিত করতে সহায়ক । ৫-জি’র সাথে করোনাভাইরাসের সম্পর্ক নাকি এখানেই । যদিও সরকার প্রধানরা তা মেনে নিচ্ছেন না ।
করোনাভাইরাসের তান্ডবে কারো জীবনে পৌষ মাস- কারো জিবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে । গণমাধ্যমের বদৌলতে উন্নত বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে সুযোগসন্ধানীর কাছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আর্শিবাদ হয়ে আসার খবর জানা যায় । লকডাউনে ঘর বন্দি কর্মহীন অসহায় ও গরীব মানুষকে সাহায্য করার জন্য বিদেশী সহায়তায় সরকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে । কিন্তু যাদের রক্তে দূর্নীতি ও সুবিধাবাদের নীতি প্রবাহমান সেই চেয়ারম্যান, মেম্বার ও দলীয় ক্যাডারদেরকে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরন করার ত্রাণের চাল চুরি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখা যায় । করেনাভাইরাস মহামারী যেন এদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে এসেছে । এদের জন্য পৌষের পিঠা পাবর্নের সুযোগ এনে দিয়েছে । ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা দেশের ব্যাংক সমূহ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংক উজার করেছেন । শেয়ার মার্কেট লুট করে ঋণ খেলাপী হয়ে বিদেশে বেগম পাড়ায় ঘরবাড়ি করেছেন । উন্নত বিশ্বে টাকা পাচার করেছেন তাদের কাউকে অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি । অথচ গরিবী হটানোর জন্য যে সকল ভাই/বোনেরা মার্তৃভূমি ছেড়ে বিদেশ বৈভূবে পারি দিয়েছিলেন সেই প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে যার যার এলাকায় সাধ্যানুযায়ী গরীব ও অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরন করে চলেছেন । করোনাভাইরাস শুরুতে কর্মহীন হয়ে পরার কারনে পশু পাখী যেভাবে বেলা শেষে বা ঝড় বাদলের মাঝে যার যার নিড়ে ফিরে যায় তেমনি অনেক প্রবাসী তার নিড়ে অর্থ্যাৎ নীজ দেশে ও বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার পর সরকার ও এলাকার মানুষের দ্বারা নির্গিহীত হয়েছিলেন । অনেক প্রবাসী থানা ওয়ালার মাধ্যমে লকডাউন ভাঙ্গার অজুহাতে আর্থিক জরিমানা করা সহ হয়রানীর শিকার হয়েছিলেন । সোনার ডিম দেওয়ার প্রবাসীরা যাতে করোনাভাইরাসকালে দেশে সফর না করেন সে বিষয়ে  বিদেশ মন্ত্রী নসিহত দিয়েছিলেন । টেলিভিশনের লাইভ প্রোগ্রামে প্রবীসীদেরকে নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছিল । বিভিন্ন শহরে দোকানে দোকানে প্রবাসীদের প্রবেশ নিষেধ বোর্ড ঝুলানো হয়েছিল । ভাবখানা এমন দেখানো হয়েছিল যে প্রবাসীরা বাংলাদেশের কেউ না । ওরা ভিন দেশের নাগরীক । অথচ বাংলাদেশস্হ প্রতিটি বিদেশী দূতাবাস নিরাপত্তার প্রয়োজনে সরকারী খরচে তাদের সকল নাগরীকগণকে যার যার দেশে নিয়ে যান । এসবের পরেও গরীব ও অসহায় মানুষের দূরবস্হা দেখে মানবিক কারনে প্রবাসীরা যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ত্রাণ বিতরন বা নগদ টাকা বিতরন করেন তখন সবাই চোখ বুঝে সে ত্রাণ বা সাহায্য গ্রহন করেন । ভূলেও কেউ জিজ্ঞেস করেননি যে এই টাকায় করোনার গন্ধ আছে কি না । কি আজব জাতি আমরা !
শেষ কথা হলো বিদেশী সাহায্য ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যায় করে সাড়া দেশে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধূনিক হাসপাতাল স্হাপন করা হয়েছিল বলে গর্ব করা হয় । সেখান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গণমানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কি সম্ভব হয়েছিল । ঘাতক করোনা ভাইরাসের নাম শুনলেই ডাক্তার সেবকরা পালিয়ে বেড়ানোর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে । এটা রাষ্ট্রীয় ব্যার্থতা । যে জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছিল তারা রাষ্ট্রের এই ব্যর্থতার বোঝা সইবে কি করে । করোনাভাইরাসকালে কারো জীবনে পৌষ মাস-কারো জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে প্রবাদটির সাথে মিল রেখে প্রবন্ধটি লিখে পাঠকদেরকে বুঝাতে পারলাম কিনা জানিনা ।
এম, এ, আজিজ 
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট ও সমাজ সেবক
লন্ডনঃ ২৯ মে ২০২০ ।