নুর উদ্দিন সুমন ॥ চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে দ্বিতীয় বিয়ে করতে গিয়ে একই উপজেলার নয়ানী গ্রামের হাফিজ উল্লার ছেলে এক সন্তানের জনক সুজন মিয়া ও তার বিয়ের ঘটক বেনু মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। অপরদিকে, ইউপি মেম্বার তাউছ মিয়াকে অপহরণের চেষ্টা করায় মাইক্রোবাস চালকসহ তিন যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, নয়ানী গ্রামের সুজন মিয়া প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি আশ্রয়ন প্রকল্পে যায়। সেখানে হাদিছ মিয়ার মেয়ের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। এই বিয়েতে কনেপক্ষ বরকে লাখ টাকা যৌতুক দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিয়ের দিন বর সুজনের সাথে আসা বরযাত্রীদের খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু বর সুজনের গায়ে সামাজিক প্রথা অনুসারে পোশাক না থাকায় কনেপক্ষের লোকজনের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এরই মধ্যে কনেপক্ষের লোকজন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, বর সুজন বিবাহিত ও তার এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি বিয়েবাড়ির লোকজনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিবাহ অনুষ্ঠানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
কনের স্বজনরা জানান, বিয়ের ঘটক বেনু মিয়া প্রলোভন দিয়ে তথ্য গোপন করে বিবাহিত যুবকের সাথে কিশোরীর বিয়ের দিন ধার্য্য করেন। বিয়ের ঘটক বেনু মিয়ার দাবি কনে পক্ষকে বরের প্রথম বিয়ের বিষয়টি অবগত করেছেন। বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী বর ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঘটক ও বর সুজন বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে হাজির হয়। কিন্তু বর সুজন বিগত ৬বছর পুর্বে উপজেলার বড়খের গ্রামের খাইরুন্নাহার নামের এক নারীকে বিয়ে করে তার ৫ বছরের এক পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বর সুজনের দাবি তার প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছে। কিন্তু তালাকের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিবাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) জানান, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ এবং তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতিপত্র ছাড়া বিবাহ সম্পাদন করবেন না বলে কাজী বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যান। কনে পক্ষ এই প্রতারক বরের সাথে বিয়ে ভন্ডুল করে দেয়। তখন কনে পক্ষ বর ও বরের সাথে আসা ঘটক ও তার লোকজনকে আটক করে রাখে। এই নিয়ে সমঝোতা করতে কনে পক্ষের বাড়িতে কনে পক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে চলে দফায় দফায় বৈঠক। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। ফলে মেম্বার তাউছ মিয়াকে কনের বাবা বিষয়টি জানান। মেম্বার তাউছ মিয়া চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে না পারায় উপস্থিত লোকজনদের সিদ্ধান্তক্রমে বর ও বরের ঘটককে থানায় সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশের কাছে গ্রেফতার এড়াতে অবশেষে বরের স্বজনরা টাকা ফিরত দিতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বর পক্ষ টাকা পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করতে শুরু করেন। এদিকে রাত গভীর হয়ে যায়। হঠাৎ বরের গাড়ি পালিয়ে যাবার সময় স্থানীয় লোকজন বরের গাড়ি চালকসহ তাদেরকে আটক করে রাখে। পরে দিবাগত রাত ২টায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার তাউছ মিয়া প্রশাসনকে জানালে চুনারুঘাট থানার এসআই জাহাঙ্গীর ও এএসআই হারুনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কনের বাড়ি থেকে আটক ঘটক ও বরকে থানায় নিয়ে আসেন। আটক বর উপজেলার নয়ানী গ্রামের হাফিজ উল্লার ছেলে এক সন্তানের জনক সুজন মিয়া (৩০) ও ঘটক বেনু মিয়া (৬০)। বিষয়টি বর পক্ষের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ দেখা দেয়। শুক্রবার সকাল ১১টায় মেম্বার তাইছ মিয়া চুনারুঘাট মধ্যবাজার পৌছামাত্রই একটি হাইএস গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারসহ কয়েকজন যুবক তাকে অপহরণের চেষ্টা করে। মেম্বারের শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মাইক্রোবাস চালকসহ তিন যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। মেম্বার তাউছ মিয়া জানান তিনি কেন বরের প্রতারণার বিষয়টি পুলিশকে জানালেন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা অপহরণ করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
অপরদিকে মাইক্রো চালকসহ তিনজন আটকের খবর মাইক্রো শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টায় মধ্যবাজারে আটককৃতদেরকে ছাড়িয়ে নিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হকরে নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে বিকালে মেম্বার তাউছ মিয়ার উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মেম্বার সমিতির লোকজন প্রতিবাদ সভা করে। এতে উপস্থিত ছিলেন ৫নং শানখলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুর রহমান তরফদার সবুজ ও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের সদস্যবৃন্দ।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, খবর আসে ৫নং শানখলা ইউনিয়নের আশ্রয়ণ এলাকায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করতে এসে বর ও বরের ঘটকসহ বরযাত্রীদের আটক করা হয়েছে। বিষয়টি উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্থানীয়ভাবে আপোষ মিমাংসা না হওয়ায় স্থানীয়দের অভিযোগে আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসা হয়। এখন পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষ কোন ধরণের অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।