স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান, রোটারী অঙ্গনের প্রাণপুরুষ, প্রবীণ আইনজীবী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মতিন খান এর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২০ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। আব্দুল মতিন খান এর মৃত্যুদিবসকে সামনে রেখে মরহুমের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধুলিয়াখালে ‘হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থা’র উদ্যোগে পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও এতিম ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মতিন খান এর জীবন বৃত্তান্ত ঃ ১৯৪৬ সালের ২৪শে এপ্রিল শুক্রবার সদর থানাধীন ধুলিয়াখাল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোঃ আব্দুল মতিন খান। স্কুল রেকর্ড অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৭-০২-১৯৪৯ ইং। তাঁর পিতার নাম মোঃ সুন্দর খান। তিনি ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্তেকাল করেন।
শিক্ষাজীবন ঃ হবিগঞ্জ সদর থানাধীন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপান্তে ১৯৬৩ সনে হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ থেকে ১৯৬৫ সনে উচ্চ মাধ্যমিক (বাণিজ্য), ১৯৬৮ সালে বি.কম ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে এল.এল.বি ডিগ্রী লাভ করেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে।
কর্মজীবন ঃ আব্দুল মতিন খান ১৯৬৭ সালের আগস্ট থেকে ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হবিগঞ্জ সদর থানাধীন সুকড়ীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৮ সালের ২রা ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তান পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে (বর্তমান বার্ড) গবেষণা অধীক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তথায় কর্মরত থাকাকালীন ১৯৭০-৭১ সনে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
আইন পেশা ঃ ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসের ৬ তারিখে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ লাভ করেন তথায় আইন পেশায় নিয়োজিত হন। কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির বিশিষ্ট আইনজীবী আবু তাহের খান (মরহুম) ও মুজিবুর রহমান (মরহুম) এর অধীনে জুনিয়র হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। তারপর ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করে নিজের শহরে আইন পেশাা শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের সনদপ্রাপ্ত হন।
১৯৮২ সনে সহকারী দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং হবিগঞ্জ জেলায় উন্নীত হওয়া পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সেশন ডিভিশন সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার প্রথম পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন এবং ১৯৮৬ সনের ২০ শে জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটিতে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় যুগ্ম সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও ১৯৯৪-৯৫ সনে সভাপতি নির্বাচিত হন। তদুপরি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সোসাইটি হবিগঞ্জ শাখার ১৯৮৫ সন থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমাজ কর্মে সম্পৃক্ততা ঃ ১৯৭৯-৮৫ সন পর্যন্ত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাচিত সহ-সভাপতি এবং আজীবন সদস্য।
ক্রীড়া ঃ ১৯৭৬-৮৫ সন পর্যন্ত হবিগঞ্জ সাবেক মহকুমা বর্তমানে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ১১-১০-১৯৮৫ সন থেকে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধিষ্টিত ছিলেন। ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত নির্বাচিত সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
রোটারী ঃ রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৯৩-৯৪ ও ১৯৯৪-৯৫ সনের নির্বাচিত সভাপতি। রোটারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৯৪ সনের ৭-১৪ ই ডিসম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের ফোর্ট মায়ার সিটিতে অনুষ্ঠিত ক্লাব অব ফোর্ট মায়া এর বিশেষ রোটারী কনফারেন্সে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সনের ১৫ই ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের রোটারী ক্লাব অব লাকবরা এর সাপ্তাহিক সভায় যোগদান করেন।
শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বদান ঃ হবিগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠা লগ্নে গঠিত কমিটির সদস্য। হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৮৪-১৯৮৫ সনে পরিচালনা কমিটির সদস্য। দি রোজেস, হবিগঞ্জ এর ১৯৮৫-৮৬ সনে পরিচালনা কমিটির সদস্য।কবি নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়, ভাদৈ, হবিগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শচীন্দ্র কলেজ গভর্নিং বডির বিদ্যুৎসাহী সদস্য। আলিফ সোবহান কলেজ, মিরপুর, বাহুবল। গভর্নিং বডির সদস্য। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ২০০৪ সনের শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত। হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য। হবিগঞ্জ “ল” কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ২০০৯- জুন ২৮, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত। সদস্য, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। আদর্শ জুনিয়র হাই স্কুল (বালিকা), ধুলিয়াখাল এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বায়তুল আমান জামে মসজিদ, টাউন হল রোড, হবিগঞ্জ এর ১৯৯৫-৯৮,২০০১-২০০৭ পর্যন্ত সনের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। নুরানী জামে মসজিদ ও বাজার, গোপায়া হবিগঞ্জ এর ১৯৯৮-২০০৮ সনের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। হবিগঞ্জ জেলা সদরে অনুষ্ঠিত ১৯৮৪-৮৮ সনের এস.এস.সি পরীক্ষা সমুহের ভিজিলেন্স টিমের সদস্য। হবিগঞ্জ ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। ২০০২-২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি। বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি, হবিগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক। ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, হবিগঞ্জ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত হবিগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পরিবহন অথরিটির সদস্য। হবিগঞ্জ জেলা অটো রিক্সা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। হবিগঞ্জ মাইক্রোবাস মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
বৈবাহিক জীবন ঃ ১৯৬৮ সনের ২৯ শে সেপ্টেম্বর থেকে কুমিল্লা শহরের বিশিষ্ট আইনজীবী মরহুম মৌলভী আব্দুল মান্নাফ চৌধুরী সাহেবের কন্যা সুরাইয়া খানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৬ সনে সস্ত্রীক পবিত্র হজব্রত পালন করেন। তাঁর ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় মেয়ে তাহমিনা খান জলি, এম.এ. এল.এল.বি অ্যাডভোকেট, জর্জ কোর্ট, হবিগঞ্জ। বড় ছেলে মোঃ শাখাওয়াত হোসেন খান, ব্যারিস্টার এট্ -ল’, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। ছোট মেয়ে ফাহমিদা খান ডলি, বি.এ (অনার্স), এম,এ, প্রফেসর, রয়মননেছা ডিগ্রী মহিলা কলেজ, চাঁদপুর। ছোট ছেলে মোঃ শওগাতুল হাসান খান, বি.এ (অনার্স), ডারহাম বিশ^বিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য। ডাটা এনালাইসিস্ট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ব্যাংক, লন্ডনে কর্মরত।
বিদেশ ভ্রমণ ঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা সদর ভ্রমণ করেছেন আব্দুল মতিন খান।