স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ পুকুর থেকে দেশসেরা হাফেজ আহমদ মনসুর তাহমিদের (১৭) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় লাশ উদ্ধার করা হয়। তাহমিদ হবিগঞ্জ শহরের ঈদগাহ এলাকার সফিক মিয়ার ছেলে। সে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দারুল ইরশাদ মাদরাসা থেকে হাফেজি সম্পন্ন করে জামাত লাইনে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাহমিদ বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত আড়াইটার দিকে বাসার পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ পুকুরে মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দারুল ইরশাদ মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা জাবের আল হুদা চৌধুরী জানান, তাহমিদ মেধাবী ও ভদ্র ছাত্র। সে জাতীয় পর্যায়ে সেরা ১০ জনের মাঝে একজন হাফেজ ছিল। সে মধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করতো। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সম্ভবত সে যাদের সাথে চলাফেরা করতো কোন কারণে বিবাদের জেরে তারা তাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা তার।
বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তাহমিদের প্রথম জানাজা নামাজ এবং বাদ আছর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজ বাড়ি আলাপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে গতকাল সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে হাফেজ তাহমিদ এর মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দারুল ইরশাদ মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন। ওই সময় তাহমিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের দাবি জানানো হয়। অন্যতায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়া এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস। এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ২২ জুন রাতে হবিগঞ্জ পৌরসভার শায়েস্তানগর ঈদগাহ এলাকার নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হাফেজ আহমদ মনসুর নামের মেধাবী মাদ্রাসাছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত মনসুর ‘দারুল ইরশাদ বহুলা মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি হিফজ শেষ করে আলিয়া ধারায় প্রাথমিক পড়াশোনার পর এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। কুরবানির ছুটিতে বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মাদ্রাসা খুললেও তিনি ফেরত যেতে পারেননি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পরিবার সূত্রে জানা যায় রাতের গভীরে কে বা কারা তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। একজন কোমলমতি ছাত্রকে এভাবে টার্গেট করে হত্যাকা- চালানো কেবল বর্বরতা নয়, এটি একটি নির্মম ও পূর্বপরিকল্পিত অপরাধ। তারা আরও বলেন, হাফেজ আহমদ মনসুর ছিলেন শান্ত, বিণয়ী ও অতি সাধারণ জীবনযাপনকারী একজন ছাত্র। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা, অপরাধমূলক সংশ্লিষ্টতা বা সংঘবদ্ধ বিরোধের তথ্য নেই। এমন একজন নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে হত্যা গোটা শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রসমাজের নিরাপত্তা ও মনস্তত্ত্বে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি একেএম সাহাবুদ্দিন শাহীন জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সে পানিতে ডুবে মারা গেছে। পরিবারের লোকজন যদি হত্যার অভিযোগ দেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।