![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2025/01/005-8.jpg)
দুর্নীতিবাজ কর্মচারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে প্রশাসন কর্তৃক টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড কে বা কারা ছিঁড়ে ফেলেছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বাজার অপসারণের বিজ্ঞপ্তি জারির পরও পুনরায় বাজার বসাতে চেষ্টা চালাচ্ছে বাজার কমিটির লোকজন। যদিও প্রশাসন বলছে- অবৈধ জনতার বাজার পশুরহাট বসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বুধবার দুপুরে জনতার বাজার অপসারণে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড ছিঁড়া অবস্থায় দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান- গত দুই সাপ্তাহ পূর্বে জনতার বাজার অপসারণে জেলা প্রশাসনের নিদের্শনার কথা উল্লেখ করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড টানানো হয়। টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- কোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো হাট পরিচালনা করলে বা অবৈধভাবে হাট পরিচালনায় সহযোগীতা করলে অথবা মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ হবে। আইন অমান্যকারীকে সংশ্লিষ্ট আইন মোতাবেক কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড প্রদান করা হবে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কে বা কারা জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে প্রশাসন কর্তৃক টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলে।
জানা যায়- সিলেটের বৃহত্তম পশুর হাট নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরের জনতার বাজারে প্রতি বছর কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। ঈদুল আজহার আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জনতার বাজারে গরু-ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। প্রতি শনি ও সোমবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশে জনতার বাজার পশুর হাট বসে। এতে প্রায় ৪-৫ হাজার গরু-ছাগল উঠে। ক্রেতা-বিক্রেতাদেরও উপচেপড়া ভিড় থাকে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মামলা জটিলতায় ইজারা দিতে না পারা জনতার বাজারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদায় করা হতো হাসিল। রশিদের মাধ্যমে ওঠা টাকা জমা হতো সরকারি কোষাগারে। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রশিদ ছাড়াও হাসিল আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গেল বছরের ৫ ডিসেম্বর অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুরহাট বসার ফলে মহাসড়কের যানজট সৃষ্টির ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
অভিযোগকারী মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন- বাজারের দায়িত্বরত সরকারী কর্মচারীরা সরকারী প্রাপ্ত টাকা সাঠিকভাবে আদায় করেন না এবং আদায়কৃত টাকা জমা না দিয়ে যৎসামান্য জমা দেন, অবশিষ্ট টাকা নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ক্রেতাকে দেয় রশিদ সমূহে কোন অফিসারের স্বাক্ষর থাকে না। তারা ১০টি রশিদ বই আনলে ৩টি তাদের রেজিস্ট্রারিতে এন্ট্রি দেন, বাকিগুলো এলাকার লোক দিয়ে আদায় করেন। আদায়কৃত টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই বাজারে গন্ডগোল হয়েছে। এ ছাড়া এলাকার চিহ্নিত কিছু খারাপ লোক বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মারামারি হয়। কিছুদিন পূর্বে বাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্জন চন্দ্র দেব আদায়কৃত টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সহকর্মীর মধ্যে মারামারির কারণে তাকে বাজার থেকে সরানো হয়। ইতিমধ্যে বাজার থেকে অবৈধভাবে অর্জিত টাকা দিয়ে হবিগঞ্জ শহরে বিরাট বাসা নির্মাণ করেছেন। ছেলে মেয়েকে ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট বাসায় রেখে ব্যয়বহুল বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করান। এভাবে প্রত্যেক সরকারী কর্মচারীই বিপুল অর্থ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ফলে বাজারের দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারীগণ বার বার বদলী হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসে আসেন শুধু বাজারে টাকা আত্মসাতের জন্য।
এ ব্যাপারে মোঃ মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন- জেলা প্রশাসক এক আদেশে বাজার বন্ধ করলেও বাজারের টাকা আদায়কারী দুর্নীতিবাজ কর্মচারিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি অফিস সহকারী অঞ্জন চন্দ্র দেব, অফিস সহকারী আব্দুল কাইয়ুম, সাবেক সিএ বর্তমানে বানিয়াচঙ্গে চাকুরিরত মাহবুব আলমসহ দুর্নীতির সাথে জড়িত সকল কর্মচারিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জনতার বাজার অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনা মোতাবেক অবৈধ জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণ করতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড টানানো হয়। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পশুরহাট অপসারণে প্রশাসন কর্তৃক টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড কে বা কারা ছিঁড়ে ফেলেছে। এদিকে প্রশাসনের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জনতার বাজার পশুরহাটের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পুনরায় বাজার বসাতে চেষ্টা চালাচ্ছে বাজার কমিটির লোকজন।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাস অনুপ বলেন- অবৈধভাবে স্থাপিত জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে জেলা প্রশাসকের বিজ্ঞপ্তির আলোকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, জনতার বাজার পশুরহাট অপসারণে প্রশাসন কর্তৃক টানানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলার বিষয়টি অবগত হয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। যদি আদেশ অমান্য করে কেউ পশুরহাট বসায় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।