কামরুল হাসান ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শেষসীমানায় সবুজেঘেরা রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে উত্তোলন করা হচ্ছে মূল্যবান সিলিকা বালু। এতে করে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনের পাহাড় টিলা। বনের পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে জনচলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কও। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু বালুখেকো চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলায় অবস্থিত রঘুনন্দন সংরক্ষিত বন। এই বনের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলছে ‘গাঁদাছড়া’। এইছড়ার পানছড়ি অংশে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে লাখ লাখ ঘনফুট সিলিকা বালু। এসব বালু পাচার করা হচ্ছে কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন ও পাচার করে অল্প দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে বালুমাফিয়া চক্রটি। বিপরীতে পাহাড়ের টিলা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন।
স্থানীয়রা জানান, পানছড়ি এলাকার এক ব্যক্তির নেতৃত্বে চলে পাহাড় কাটার মহোৎসব। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা মামলার ভয় দেখায় সে। তার এই বালু উত্তোলন কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একই এলাকার কয়েকজন। আর এসব বালু বিভিন্ন স্থানে পাচারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরো কয়েকজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি মৌজার ৮ নং বস্তি এলাকার গাঁদাছড়ায় বিকট শব্দে চলছে অর্ধডজন ড্রেজান মেশিন। প্রায় বিশ একর জায়গা জুড়ে চলছে ড্রেজার মেশিনের এই তান্ডবলীলা। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে পুরো এলাকা। ভাঙন দেখা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী একাধিক টিলায়। বসত ভিটা হারানো শংঙ্কায় আছেন কয়েকটি চা শ্রমিক পরিবার।
বালু উত্তোলন কাজে থাকা শ্রমিকরা জানান, তারা দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে বালু উত্তোলনের কাজ করছেন। এসময় মেশিন দিয়ে উত্তোলিত বালু ট্রাক্টরে লোড করতেও দেখা যায় কয়েকজন শ্রমিককে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, চুনারুঘাটসহ কয়েকটি উপজেলায় পাহাড়-টিলা কেটে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। এতে সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ ও প্রকৃতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে সেটা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা আক্তারের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এসব এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।