স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার ৯নং বাউসা ইউনিয়নের হযরত শাহ তাজ উদ্দিন কোরেশী (র.) উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম সহ দুর্নীতিতে জড়িত আরো দুজন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার উক্ত বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ওইদিন শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, ল্যাব অপারেটর জাহিদ হাসান এবং অফিস সহকারী সুমনা খানম। আন্দোলনে এলাকার মুরুব্বী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিদ্যালয়ের অন্যন্য শিক্ষকরা একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউএনওর হস্তক্ষেপে প্রথম দিনের আন্দোলন সমাপ্তি হয়।
১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার আবারো আন্দোলনে নামে ছাত্ররা। ওইদিনও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়নের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ ইউএনও ও হবিগঞ্জ ডিসি অফিস থেকে ফোনালাপের পরে শিক্ষার্থীদের আশ^াস দিলে তারা আন্দোলনের ইতি টানেন।
গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নামেন। এদিন বিদ্যালয়ের অন্যন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন। এসময় ময়মনসিংহের জামালপুর থেকে একজন ভুক্তভোগী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তার কাছ থেকে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট জাহিদ হাসান চাকরি দেওয়ার নাম করে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেন।
পরে নবীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সমিতির সেক্রেটারি সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদের আশ^াসে গতকালও আন্দোলনের ইতি টানেন ছাত্ররা। তবে ছাত্ররা তাদের আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সুমনা খানম ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। স্কুলে ঘুষ ছাড়া কোন নিয়োগ হয় না। তিন মাস ধরে ল্যাব খোলা হয় না, ল্যাবের সকল ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ল্যাবের দায়িত্বে ছিলেন জাহিদ হাসান। উনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৪টি ল্যাপটপ ছিল, বর্তমানে ল্যাবে মাত্র পাঁচটি ল্যাপটপ রয়েছে। বোর্ড থেকে কোনো নোটিশ ছাড়াই ষষ্ঠ শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন বাবদ ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে, গতবছর যা ছিল মাত্র ৬৮ টাকা। অষ্টম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ১২৫ টাকা থাকা সত্ত্বেও ৪০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে নবম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ফি, যার মূল ফি ২১১ টাকা মাত্র। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই স্কুলে দিনরাত্রি যাপন করতেছেন, যেখানে ৩০০ টাকার স্টাম্পে স্বাক্ষর করে এসেছেন সরকারি কোনো কিছু ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ভোগ করবেন না। তিনি টিভি, ফ্রিজ সহ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক মালামাল ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিলের এমাউন্ট দীর্ঘ করে গেছেন। তাছাড়াও বিদ্যালয়ে কোচিং ব্যবসার কারণে নিয়মিত ক্লাস হয় না। ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট-কোচিং পড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় শ্রেণিকক্ষেই। এমনকি শিক্ষকরা ক্লাসের প্রতি কোন প্রকার মনোনিবেশ করেন না। প্রধান শিক্ষক একটানা ১৭ দিন ছুটি কাটালেও তার উপস্থিতি খাতায় রয়েছে স্বাক্ষর। তারা অভিভাবক ডাকেন টেস্ট পরীক্ষায় ফেইল করার পর। আর যারা টেস্টে ফেইল করে তাদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় ২ হাজার টাকার বিনিময়ে। এই টাকা প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী সুমনা খানম আত্মসাতের কথা স্বীকার করে টাকা ফিরিয়ে দিবেন বলেও জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ন্যায্য অধিকার আদায়ে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আমরা কোনো শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইনি। আমরা এক হয়ে লড়াই করলে অবশ্যই আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবো। আর অতীতের তাজ উদ্দিন স্কুল ফিরিয়ে দিতে পারবো আমাদের কোমলমতি ভাইবোনদের।