থানা ছেড়ে পালিয়েছে পুলিশ ॥ আহত শতাধিক

পুলিশ মনে করে সোহেল আখঞ্জী নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা

আক্তার হোসেন আলহাদী ॥ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও শতাধিক লোক। গতকাল সোমবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা বানিয়াচং উপজেলার এলআর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে সমবেত হয়ে একটি মিছিল নিয়ে বেলা ১টার দিকে উপজেলার নতুন বাজার হয়ে বড় বাজার যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা থানার সামনে দিয়ে যেতে চাইলে ঈদগাহ এর সামনে আন্দোলনকারীদের বাঁধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীরাও তখন পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুসহ ৬ জন নিহত হন। এতে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক লোক।
নিহতরা হলেন- যাত্রাপাশা গ্রামের সানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২), মাইঝের মহল্লার আব্দুর নূরের ছেলে আশরাফুল (১৭), পাড়াগাঁওয়ের শমসের মিয়ার ছেলে মোজাক্কির (৪০), কামালখানী গ্রামের নয়ন (১৮), জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আব্দুল রউফের ছেলে তোফাজ্জল (১৮) ও পূর্বগড়ের ধলাই মিয়ার ছেলে সাদিকুর (৩০)। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা ও ৬ জনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ দলবদ্ধ হয়ে থানায় হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি তারা থানা ঘেরাও করে রাখে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশ মনে করে সোহেল আখঞ্জী (৩০) নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা আক্তার জানান, ৬ জনের মরদেহ আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত) মোট ৬২ জন ভর্তি হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূরুল হক জানান, ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য তিনি শুনতে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বানিয়াচং গিয়েছিলাম। থানায় ঢুকতে পারিনি। প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি কোনোরকমে। এর বেশি কিছুই বলতে পারছি না।’
বানিয়াচং থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, কতজন মারা গেছে আমরা জানি না। এখন আমরা সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে আছি। থানার অবস্থা সম্পর্কেও জানি না। তবে মনে হয় থানায় কেউ নেই। তবে সেনাবাহিনী আছে।
জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ঈদগায়ের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাঁধা দেয়। তখন তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। তখন আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে উল্লেখিত ৭ জন নিহত হয়। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
আহতদের বানিয়াচং, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা সদরের আশপাশের গ্রামগুলোর লোকজন থানা ঘেরাও দিয়ে রেখেছেন।
এদিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম থানা এরিয়ায় অবস্থান নেওয়ার পর পুলিশের গুলিছুড়া বন্ধ হয়। সেনাবাহিনী জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বলে, আমরা সকল হত্যার বিচার করবো। সরকারের পতন হয়েছে, আপনাদের সকল দাবি পূরণ হয়েছে, আপনারা শান্ত হন।