এমপি আবু জাহির ও সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ খানের বাসায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ॥ নিহত ১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, বিএনপি ও আন্দোলনকারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে হবিগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ত্রিমুখি সংঘর্ষ চলাকালে রিপন শীল (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাইম আশরাফ চৌধুরী। নিহত রিপন শীল সদর উপজেলার পইল দেবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের পুত্র। তাছাড়া সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক লোক। তাদেরকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্র্শী সূত্র জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রবিবার সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শহরের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। পরে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেন বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। মিছিল সহকারে তারা শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে আসতে থাকেন। এ সময় হবিগঞ্জ সদর থানা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা মিছিল সহকারে তিনকোনা পুকুরপাড় অতিক্রম করার পর টাউন হল সড়কে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। টানা কয়েক ঘন্টা ব্যাপী চলা সংঘর্ষে গুলি ও টেটাবিদ্ধ হয়ে অন্তত শতাধিক লোক আহত হন। সংঘর্ষের সময় পুরো শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে গিয়েও আহত হন অনেকে। বন্ধ হয়ে যায় পুরো শহরের দোকানপাট।
এদিকে আন্দোলনকারীদের প্রবল হামলায় পিছু হটতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের বাসায় আশ্রয় নেন। ওই সময় আন্দোলনকারীরা এমপি’র বাসা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ এমপি ও নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। শুধু তাই নয়, ওই সময় এমপি আবু জাহির ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের বাসভবনে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ওই সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল, একটি সিএনজি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একটি গাড়ী, এমপি আবু জাহিরের গাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বেলা দেড়টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের থানার মোড় থেকে কালীবাড়ি ক্রসরোড এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এদিকে সন্ধ্যার পর এমপি’র বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীরা। তারা সংসদ সদস্যের বাসায় প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর, লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম অভিযান চালিয়ে এমপি আবু জাহির, তার স্ত্রী আলেয়া আক্তার, ব্যক্তিগত সহকারী সুদ্বীপ দাশকে উদ্ধার করে। পরে তাদের সার্কিট হাউজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তায় রাখা হয়।
এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহরের শ্যামলী এলাকার উজ্জ্বল নামে এক যুবক গুরুতর আহত হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। উজ্জল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে বলে একটি মহল গুজব ছড়িয়েছে।