স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ৬০ দিনের মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলার সাতাইহাল পূর্বপাড়া বহুমুখী সমবায় সমিতির বন্দোবস্তের আবেদন নিষ্পত্তি করার জন্য হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার ওই সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক) এর এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাক্ষরিত আদেশের প্রতি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নিস্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা ও অবাধ্যতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের করা হয়।
রিটে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রেসপনডেন্ট করা হয়েছে।
জানা যায় জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ববান মৌজার ৩৮৮ একর সরকারি খাস ভূমি সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ১০ বছর (২০২৩- ২০৩৩ সন) মেয়াদে চা চাষের জন্য ৩৮৮.৯৬ একর ভূমি শ্রীমঙ্গল টি এস্টেটকে বন্দোবস্ত প্রদান করেছে। উক্ত বন্দোবস্ত ভূমির মধ্যে ৫৫ একর ভূমিতে নবীগঞ্জ উপজেলার সাতাইহাল পূর্বপাড়া বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্যরা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ অংশীদারীত্বের চুক্তিতে গবাদি পশু, হাঁস মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, কাসাবা, লিচু, কাঠাল, মাল্টা, লেবু, কাজু বাদাম, কপি ও আনারসসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
২০০১ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের নিকট উক্ত ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০১১ সালে সমিতির পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। ২০২০ সালে ভূমি সচিব আবেদন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রশাসন এতে কর্ণপাত করেনি। চলতি বছরের ৬ মার্চ একই বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করে সমিতি।
এদিকে সাতাইহাল বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ গত শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলন তাদের চাষাবাদ করা ৫৫ একর ভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি জানান।
সাংবাদিক সম্মেলন অভিযোগ করা হয়, সমিতিভূক্ত দুই শতাধিক পরিবারের জীবিকার অবলম্বন ৫৫ একর ভূমি চা বাগানকে দেয়া বন্দোবস্ত ভূমির সাথে অন্তর্ভুক্ত করেছে। নবীগঞ্জ ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী সরেজমিন তদন্তকালে সমবায় সমিতির চাষাবাদ করা ভূমির বিষয়টি উপেক্ষা করে গেছেন। অথচ মাঠ জরিপ নকশায় সমিতির সাথে চুক্তিবদ্ধ বোটানিক ইন্ট্রিগ্রেটেড এগ্রো লি: দখলদার রয়েছে বলে উল্লেখ আছে।
সংবাদ সম্মেলন সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দিন (বীর প্রতীক) আরও অভিযোগ করেন যে, বন্দোবস্ত প্রাপ্ত কোম্পানি ইতিমধ্যে চা উৎপাদনে সক্ষমতা হারিয়েছে বলে চিহ্নিত হয়েছে। তারা দেশের একটি প্রভাবশালী আবাসন কোম্পানির সাথে গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চা চাষের নামে বিপুল পরিমাণ সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখানে কোন চা চাষ হবে না। অন্য কোন বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ফন্দি করা হচ্ছে।