আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ খেলার মাঠ ও সোস্যাল মিডিয়া জয়ের পর এবার ভোটের মাঠ দখল করে নিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। হবিগঞ্জ-৪ আসনে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীকে হারিয়েছেন তিনি। টানা ৬বার আওয়ামীলীগের দখলে থাকা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নৌকার ঘাটি চা বাগানে হানা দিয়ে দখলে নিয়েছেন ভোটের মাঠ। দেশে বিদেশে আলোচিত ব্যারিস্টার সুমন এবার সাজাতে চান চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলাকে।
হবিগঞ্জ-৪ আসনের চুনারুঘাট ও মাধবপুরের ১৭৭টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে ব্যারিস্টার সুমন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ৬৯ হাজার ৫শ ৪৩ ভোট পেয়েছেন। ব্যারিস্টার সুমন ৯৯ হাজার ৫শ ৬৩ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এ আসনে চরমভাবে ডরাডুবি হয়েছে মাহবুব আলীর। তিনি নৌকার ঘাটি চা বাগানে হানা দিয়ে আদায় করে নিয়েছেন সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি ভোট। চা বাগানে মাহবুব আলী পেয়েছেন ১৮ হাজারের কিছু বেশি ভোট। যা অতীতে কেউ নিতে পারেনি।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সোস্যাল মিডিয়ায় আলোচিত ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। তিনি চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলায় নানা সামাজিক কাজ করে আলোচনায় আসেন। চুনারুঘাটে ৪৯টি ব্রীজ করে সবার নজর কাড়েন। এছাড়া তিনি চুনারুঘাট ও মাধবপুরের সাধারণ মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতেন। করতেন সাহায্য ও সহযোগিতা। ঘর তৈরী করে এবং আর্থিক সহযোগিতার কারণেই তিনি মানুষের মন জয়ে করে দেন। পাশাপাশি তিনি দুই উপজেলায় রাজশাহীর প্রায় ৩৭ হাজার আমের চারা বিতরণ করেন। এর বাইরে তিনি ফুটবল নিয়ে সারা দেশে আলোচিত ছিলেন। ফুটবল একাডেমী করে খেলোয়াড় তৈরী করে আলোচনায় আসেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল খেলা আয়োজন করে জাগরণ সৃষ্টি করেছেন।
অপরদিকে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এলাকায় আসতেন কম। নেতাকর্মীদের সাথে ছিল তার বিরোধ। দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ আর উন্নয়ন বঞ্চিত সাধারণ মানুষের ক্ষোভ মিলে ব্যারিস্টার সুমনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়ে যায়। ব্যারিস্টার সুমন স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নামার পর একাকার হয়ে পড়ে তার মাঠ। দলে দলে ভোটাররা চলে আসে তার ঈগল প্রতীকের ছায়াতলে। ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে মানুষ প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর প্রতি তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ভোটের মাধ্যমে। ব্যারিস্টার সুমন খেলার মাঠ আর সোস্যাল মিডিয়ার মতো জয় করে নেন রাজনীতির মাঠ।
জয়ী হওয়ার পর তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় চুনারুঘাট মাধবপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি এত সম্মানী ছিলাম না, আপনারা আমাকে সম্মানী বানিয়েছেন। আমি আপনাদের সম্মানের প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো। শপথের পরদিন থেকেই আমি আমার ওয়াদা পূরণে কাজে নামতে চাই।
অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হলেন। এর আগে টানা ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচন ছাড়া সকল নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয়েছিল।