নিজের ভূমি রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেন প্রাক্তন শিক্ষক নুরুল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচংয়ের মুরাদপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে আদালতের আদেশ অমান্য করে প্রাক্তন এক স্কুল শিক্ষকের ভূমি দখলে নিয়েছে একদল ভূমিদস্যু। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
মামলার বিরবণ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিথঙ্গল এলাকার জলিলপুর মৌজার এস,এ জেএল নং-১৪৭, এস.এ খতিয়ান নং-১৪, এস,এ দাগ নং-১৫২ মোট ৭০ শতক ভূমির ক্রয় সূত্রে প্রকৃত মালিক হোসেনপুর গ্রামের মরহুম মাঞ্জু মিয়ার ছেলে প্রাক্তন শিক্ষক মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলাম। তিনি ৫০ বছর ধরে ওই ভূমিতে বিভিন্ন ফসলাদি চাষ করে আসছেন। ২০২০ সালে ওই ভূমির প্রতি একই গ্রামের মরহুম উছমান মিয়ার ছেলে রাজা মিয়ার কুনজর পড়ে। এক পর্যায়ে রাজা মিয়াগং ওই ভূমিটি দখলের চেষ্টা চালায়। এ প্রেক্ষিতে নিজের ভূমি রক্ষার জন্য ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলাম। মামলা নং-১০/২০২০ (বানিঃ)। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানীর জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন। যার মিস মামলার নং-০৬/২০২১ ইং (বানিঃ)। মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভূমিটি নূরুল ইসলামের দখলে রয়েছে বলে আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা পাল। আদেশে উল্লেখ্য করা হয়, বাদী নূরুল ইসলাম শান্তিপূর্ণ ভাবে ভূমির ভোগ দখলে বিবাদী রাজা মিয়া গং বাঁধা প্রদান করেছেন। এ অবস্থায় শান্তি ভঙ্গের সম্ভাবনা বিদ্যমান। ১৪৪ ধারা মোতাবেক ওই ভূমিতে রাজা মিয়া গংদের অনুপ্রবেশ বারিত করা হয়। পরবর্তীতে রাজা মিয়া এই আদেশের তথ্য গোপন করে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নূরুল ইসলাম গংদের বিরুদ্ধে একই আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার নং-১৪৯/২০২৩ইং (বানিঃ)। বিজ্ঞ আদালত মামলার শুনানী শেষে গত ১২ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা পাল আদেশ প্রদান করেন। আদেশে নূরুল ইসলামকে বারিত করেন। পরবর্তীতে ১৭ অক্টোবর নূরুল ইসলাম আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করলে আদালত আগামী ৭ নভেম্বর একত্রে উভয় মামলার শুনানীর দিন ধার্য করেন। এ খবর পেয়ে রাজা মিয়া আদালতে আদেশের স্বাক্ষরবিহীন ফটোকপি হাতে নিয়ে নালিশা ভূমিতে বেআইনি ভাবে বাঁশ দিয়ে খুটি স্থাপন করেন। পরে এ বিষয়টি নূরুল ইসলাম মুরাদপুর ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই ফারুক আহমেদকে জানালে ফারুক আহমেদ ঘটনাস্থলে এসে এর সত্যতা পান এবং রাজা মিয়াকে খুটিগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে রাজা মিয়া বাঁশের খুটিগুলো সরিয়ে নেয়। এদিকে গতকাল সকালে রাজা মিয়া নালিশা ভূমিতে জোরপূর্বক বাঁশের খুটি স্থাপন করে দখলে নেন।
ভূমির প্রকৃত মালিক ও দখলদার নূরুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত ভূমিটি ৫০ বছর ধরে তাদের দখলে রয়েছে। যেহেতু ভূমিটি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলছে তাই তিনি আদালতের আদেশ মেনে চলেছেন। আগামী ৭ নভেম্বর বিরোধীয় ভূমি নিয়ে দায়েরকৃত মামলার ধার্য্য তারিখ ও শুনানীর দিন। এর আগে ভূমিতে কেউ যেতে পারবে না বলে আদালতে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রাজা মিয়া আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মঙ্গলবার সকালে ভূমিটি দখল করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন- বিরোধীয় ভূমি দখলের সময় বিথঙ্গল ফাঁড়ির এসআই হুমায়ূন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
হোসেনপুর গ্রামের আলেক মিয়া জানান, বিরোধীয় ভূমিটি দীর্ঘদিন ধরে নূরুল ইসলাম গংদের দখলে রয়েছে। এতে নূরুল ইসলাম গংরা ফসলাদি চাষ করে আসছেন। এখন শুনেছি, রাজা মিয়া ওই ভূমিটির মালিক দাবি করছেন। আমরা আশাকরি আদালতের মাধ্যমেই এই বিরোধের নিস্পতি হবে। স্থানীয় মেম্বার আশরাফ উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভূমিটি নুরুল ইসলাম গংদের দখলে রয়েছে। ইদানিং শুনেছি, ওই ভূমিটির মালিকানা দাবি করছেন রাজা মিয়া গং। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মামলা মোকাদ্দমা চলছে। এরই মধ্যে গতকাল ভূমিটিতে রাজা মিয়া গংদের বাঁশের খুটি স্থাপন করতে দেখেছি। ইউপি সদস্য সিরাজ মিয়া জানান, ভূমিটি নিয়ে আদালতে যেহেতু মামলা চলছে, আদালতই এর সমাধান দেবে। এ নিয়ে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি। এসআই হুমায়ূন জানান, বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে যাতে কেউ কোন সংঘাতে না জড়ায় এ ব্যাপারে উভয় পক্ষকে সতর্ক করতে গতকাল সকালে হোসেনপুরে গিয়েছিলাম। যখন তারা ভূমিটি দখল করার জন্য বাঁশের খুটি স্থাপন করেছে তখন আমি সেখানে ছিলাম না। মুরাদপুর ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই ফারুক আহমেদ জানান, ভূমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় ভূমিতে ১৪৪ ধারাজারী রয়েছে। কিন্তু ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজা মিয়া গং সম্প্রতি দখলে গেলে আমি তা প্রতিহত করি। যারা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।