হবিগঞ্জ শহরে চুরি প্রতিরোধে ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
রাত ১১টার মধ্যে শহরের সকল দোকানপাট বিশেষ করে রাস্তার পাশে যে সকল চায়ের দোকান খোলা থাকে এগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যারা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাতে শহরে যে সকল সিএনজি অটোরিক্সা, কার, মাইক্রোবাস প্রবেশ করবে রাত ১২টার পর ভোর না হওয়া পর্যন্ত তারা শহর ত্যাগ করতে পারবে না ॥ রবিউল ইসলাম পিপিএম
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ চুরি প্রতিরোধে হবিগঞ্জ শহরের প্রতিটি হোটেলে সপ্তাহে অন্তত ২ দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। রাত ১১টার মধ্যে শহরের সকল দোকানপাট বিশেষ করে রাস্তার পাশে যে সকল চায়ের দোকান খোলা থাকে এগুলো অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। যারা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাতে শহরে যে সকল সিএনজি অটোরিক্সা, কার, মাইক্রোবাস প্রবেশ করবে রাত ১২টার পর ভোর না হওয়া পর্যন্ত তারা শহর ত্যাগ করতে পারবে না। শুধুমাত্র রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এর আওতামুক্ত থাকবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) শহরে চুরি প্রতিরোধে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এছাড়াও তিনি শহরের বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লায় অবস্থানকারী ছিচকে চোর, মাদকসেবী ও টোকাইদের নাম এবং নদীর পাড় এলাকায় অবস্থানকারী অপরাধীদের নামের তালিকা থানায় জমা দেয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি দেখে শুনে সবল পাহারাদার নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, রাতে নিয়োগকৃত কোন পাহারাদার ঘুমিয়ে থাকে কি না তা পুলিশ মনিটরিং করবে। তিনি শহরের প্রতিটি গলিতে পাহারাদার নিয়োগের পাশাপাশি পুলিশ প্রত্যেক এলাকায় প্রতিদিন ডিউটি করছে কি না তা অবহিত করার আহবান জানান। গতকাল রাতে শহরের সবুজবাগ এলাকায় ব্যবসায়ীদের নিয়ে পুলিশের মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যকস সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা। ব্যকসের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীরের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় সদর থানার ওসি মাসুক আলী, ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ, ব্যকসের উপদেষ্টা, ব্যকস নেতৃবৃন্দসহ ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীবৃন্দ বলেন, চিহ্নিত চোর তার সহযোগিদের দিয়ে শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি করাচ্ছে। ব্যবসায়ীবৃন্দ চিহ্নিত চোরদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সদর থানার ওসি শীঘ্রই শহরের চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত চোরদের গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
ওসি তদন্ত দৌস মোহাম্মদ বলেন, হবিগঞ্জ শহরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েক লাখ লোকের বসবাস। তাই কে ভাল আর কে খারাপ তা নির্ণয় করা কঠিন। তবুও পুলিশ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিনেমাহল এলাকায় চুরির ঘটনায় সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ এনে পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু ওই ফুটেজের রেজুলেশন কম থাকায় চোর সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবুও পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চোরেরা আমাদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের চুরির কৌশল পরিবর্তন করেছে। শহরে বর্তমানে উঠতি বয়সী ১৫ থেকে ২০ জন চোর রয়েছে। শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি উপস্থিত সকলকে আশ্বস্ত করেন। সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীবৃন্দ তাদের দোকানে চুরির ঘটনা উপস্থাপন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সহযোগিতা কামনা এবং নিজেরা কি ব্যবস্থা নিলে চুরি প্রতিরোধে কার্যকর হবে এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শ কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দিবাগত রাতে শহরের সিনেমাহল বাজার এলাকায় ৩ দোকানে চুরি সংঘটিত হয়। চোরেরা ওই তিন দোকান থেকে নগদ টাকাসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, রাতে তিনি দোকান বন্ধ করে বাসায় যান। সকালে তার পাশের দোকানদার মোবাইল ফোনে জানান তার দোকানের সার্টার খোলা রয়েছে। তিনি দোকানে এসে দেখেন তার দোকান চুরি হয়েছে। দোকান থেকে চোরেরা নগদ টাকাসহ চাউল, গুড়াদুধসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে গেছে। তার পার্শ্ববর্তী শাহরিয়া টেলিকম এবং একই বাজারের কামাল স্টোরেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি ব্যকস সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর এবং সদর থানা পুলিশকে অবগত করা হয়। পরে ব্যকস নেতৃবৃন্দ এবং সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উপস্থিত ব্যবসায়ীরা জানান, শহরে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটলেও কোন চোর গ্রেফতার বা চোরাই মালামাল উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এরকম চলতে থাকলে একসময় তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।