নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছে তেমনি ক্ষতির মুখে পড়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। উপজেলার পৌরসভা সহ অর্ধ শতাধিক বাজারে কয়েক হাজার ছোট বড় দোকানদার করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দোকান বন্ধ রেখেছে। করোনা মহামারীর এই অবস্থার মধ্যে গত রবিবার (২৬ এপিল) থেকে উপজেলার নবীগঞ্জ পৌরসভার ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
গুজবের সুত্রে জানা যায়, সরকার করোনা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আর্থিক সহয়তা ও সুদ মুক্ত ঋণ দিবে বলে পৌরসভার সবত্র গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে। গুজবকারীরা জানায় নবীগঞ্জের যে সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করবে তাদের তালিকাভূক্ত করে উপজেলা প্রশাসন তাদেরকে সরকারী আর্থিক সাহায্য বা সুদ মুক্ত ঋণ দিবে। এই গুজবটি ছড়িয়ে পড়লে নবীগঞ্জ পৌরসভার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা করোনা ভীতি উপেক্ষা করে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও হুমড়ি খেয়ে পড়ে নবীগঞ্জ পৌরসভায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন শাখায়। কোন ধরনের সামাজিক দূরত্ব না মেনেই অসংখ্য ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য নবীগঞ্জ পৌরসভায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
এই ব্যাপারে খুঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন পূর্বে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম এমপি ক্ষমতাসীন জোটের পক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে সারা দেশের সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে কোনোভাবে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা যায় কি না তা সদয় বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছে। এই বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এর পর পর কোন একটি মহল থেকে এই গুজবটি নবীগঞ্জ পৌরসভার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন শাখায় যোগাযোগকালে জানা যায়, গত রবিবার থেকে ৩ দিনে প্রায় ৩ শতাধিক ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করে নবীগঞ্জ পৌরসভা। যা তত্ত্ববধায়ক সরকারের জরুরী অবস্থার সময়ও লক্ষ্য করা যায়নি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে তারা বলেন করোনা মহামারির কারনে মাস খানেক ধরে খাদ্যদ্রব্য ও ঔষুধের দোকান ছাড়া অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন জামা-কাপড়, ইলেক্ট্রনিক্স, ট্রইলারিং দোকান সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায় জড়িতরা, যাদের ব্যবসার আয়ের ওপর শুধু মালিক নয়, কর্মচারীদের জীবিকাও নির্ভরশীল। তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। করোনার কারনে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেছে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। আসন্ন ঈদে দোকানদারদের ব্যবসার হওয়ার কথা অনিশ্চিত। তাই অন্যান্য সেক্টরে যেহেতু প্রধান মন্ত্রী অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিচ্ছেন সেহেতু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকান মালিক কর্মচারীদের কথা চিন্তা করে আর্থিক প্রনোদনা বা সুদ মুক্ত ঋণ দিবেন বলে তাদের মধ্যে গুজবটি সত্যি বলে মনে হয়েছে বলে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য পৌরসভায় ভীড় করছেন করোনা মহামারীর চরম পরিস্থিতি মধ্যে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি করোনায় পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস সেক্টর সহ বিভিন্ন সেক্টরকে করোনা পরিস্থিতি ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে আশা করি দেবেন তবে এই ব্যাপারে যেহেতু কোন ঘোষণা আসেনি সেহেতু এই পরিস্থিতিতে গুজবে কান না দিয়ে অপেক্ষা করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যপারে নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন স্বাভাবিক ব্যাপারে তবে আর্থিক প্রনোদনা বা ঋণ সহয়তার ব্যাপারে আমাদের কাছে মন্ত্রনালয় থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন এই জটিল পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করে আমাদেরকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করতে বলেছেন তবে আর্থিক প্রনোদনা বা ঋণ সহায়তার ব্যাপারে এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে সর্তক থাকতে বলেন।