নৃত্য ও নাট্যশিল্পী রওনাক আলভী রাইসা (কথা) হবিগঞ্জের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বৃন্দাবন সরকারি কলেজে অধ্যয়ন শেষে এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাডস্ কেজি এন্ড হাই স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তির সাথে সাথে স্থানীয় সুরবিতানে নাচ শিখতে ভর্তি হয়। একই সময়ে ওস্তাদ সরুজ কান্তি ও পরবর্তীতে ওস্তাদ জালাল সিদ্দিকীর তত্ত্বাবধানে গানে হাতে খড়ি। চার বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে নাট্য সংগঠন ‘জীবন সংকেত’ এ যোগদান করে। পাশাপাশি চিত্র প্রশিক্ষক তরুণ রায়ের কাছে চিত্রাঙ্কন চর্চা চালিয়ে যেতে থাকে। পড়ালেখার চাপে নাচ, গান, নাটকে অভিনয় ও চিত্রাঙ্কন একসঙ্গে বেশীদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গান ও চিত্রাঙ্কন বাদ দিয়ে নৃত্য ও মঞ্চ নাটকে অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটায় কথা। নাচ ও অভিনয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেয় সে। কথা সুরবিতানে ওস্তাদ গৌতম আচার্য্যরে অধীনে নৃত্য প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জে সরকারি বেসরকারি প্রায় সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শ্রোতা দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কার অর্জন ও সনদপত্র লাভ করেছে। এছাড়া হবিগঞ্জের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন জেলা সফর করেছে সে। ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানেও নৃত্যচর্চা অব্যাহত রাখে কথা। জাবি মুক্তমঞ্চ ও টিএসসি কেন্দ্রিক সকল অনুষ্ঠানে কথা নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০১৯ সালে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ডান্স ফেস্টিভ্যালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে কথা। ডুয়েট ও দলীয় নৃত্যে সহপাঠিনী দিপান্বিতা কর মৌরি কথা’র সঙ্গী থাকে।
মাত্র ৪ বছর বয়সে কথা জীবন সংকেত নাট্যগোষ্টি’র সাথে যুক্ত হয়। নাট্যজন অনিরুদ্ধ কুমার ধর শান্তনু, রুমা মোদক, সৈয়দ বাকী ইকবাল ও সৌরভে বিকাশ দেব’র স্নেহভাজন কথা শিশুকালে নাটকের রিহার্সেলে ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তারা কোলে কাঁধে করে বাসায় পৌঁছে দিত। কথা জীবন সংকেতের প্রযোজনা ঠাকুরমার ঝুলি, স্ত্রীর পত্র, মতিলাল পাদ্রী ও জ্যোতিসংহিতাসহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছে। মঞ্চ নাটকে অংশ নিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও কক্সবাজার সফর করেছে। কিন্তু পড়াশোনার চাপে আপাতত অভিনয়ে বিরতি।
রওনাক আলভী রাইসা (কথা) নৃত্য ও নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি কণ্ঠশিল্পী আশিকের গানসহ বেশ কিছু গানে মডেল হয়েছে। হবিগঞ্জের ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ক্লাব, ইন্টারেক্ট ক্লাবসহ অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও সে যুক্ত রয়েছে। কথা ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়াতে অনেক মেধাবী। সে দ্বিতীয় শ্রেণি না পড়ে ক্লাস ওয়ান থেকে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিকেজিসি স্কুলে ভর্তি হয়। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখে। আর্মি, এয়ারফোর্স বা নেভীতে যোগ দেয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএসএসবিতে শেষদিনের পরীক্ষায় কৃতকার্য না হওয়ায় অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করছে। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠা কথা’র লক্ষ্য উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করা। রওনাক আলভী রাইসা কথা জানায়, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনে সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছেন তার মা সুপরিচিত কবি ও সাহিত্যসেবী রুনা আক্তার স্বপ্না। যিনি প্রিয়জন সাহিত্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি। পিতা মোঃ আব্দুলাহ পেশায় ব্যাংকার হলেও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে যুক্ত। তিনি হবিগঞ্জ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সামাজিক সংগঠন আপনজনের সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কথার পরিবার শহরের রাজনগর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ২০১৭ সালে কথা ময়মনসিংহের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ইঞ্জিনিয়ার তানজীন সরকার (আশিক) এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বাবা মা ও স্বামীর প্রেরণা এবং উৎসাহে কথার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অব্যাহত আছে। কথা তার স্বপ্ন পূরণে সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছে। দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য শুভ কামনা রইল।
– মঈন উদ্দিন আহমেদ