বরফের রাজ্য সিকিম ভ্রমণ শেষ পর্ব

ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ

ফ্লাওয়ার গার্ডেন থেকে বের হবার পর বুঝতে পারলাম পুরো শহর মেঘে ঢাকা। আতিফের খুব শখ ছিল মেঘ ছুয়ে দেখার। গাড়িতে আতিফকে নিয়ে আমি সামনে বসলাম। এই ঠান্ডার মধ্যে জানালা খুলে চলন্ত গাড়িতে আতিফ কে বললাম বাইরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মেঘ ছুয়ে দেখতে!! আতিফ যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না সে মেঘ ছুয়ে দেখছে। আতিফের উচ্ছ্ব্াস দেখে আমার খুব ভালো লাগছিলো।
গাড়ি থামলো গ্যাংটক চিড়িয়াখানার সামনে। রাস্তায় কিছু ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি হচ্ছে। আমি এবং আমার স্ত্রী পেপে আর তরমুজ খেলাম…স্বাদ মন্দ নয়।
নিবিড় ভাইকে ডাকলেন পানি পুড়ি খাবার জন্য। আমাদের দেশের চটপটি এর থেকে যে অনেক ভালো এই কথা বলাই যায় তবে পানি পুড়ির স্বাদ একেবারে খারাপ ছিল না। এরপরে গেলাম চিড়িয়াখানা। বেশ বড় এলাকা জুড়ে চিড়িয়াখানা। হাঁটতে হাঁটতে সবাই কম বেশী বিরক্ত।
তাশি ভিউ পয়েন্ট। আমার কাছে মনে হয় এটিই গ্যাংটক শহরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ পুরা শহর ছিল মেঘাচ্ছন্ন কিন্তু এরপরেও ভিউ পয়েন্ট দেখতে খারাপ লাগছে না। কাঞ্ছনজঙ্ঘা পাহাড় এই ভিউ পয়েন্ট থেকেই স্পষ্ট দেখা যায় যদি আবহাওয়া ভালো থাকে।
চলে আসলাম হোটেলে। আজকেই আমাদের ভ্রমনের শেষ রাত। ঠিক করলাম রাতে M.G.Marg এ যাব। শেষ বিকেলের দিকে দুই পুত্র আর স্ত্রী কে নিয়ে শেষ বারের মতো বের হলাম। কেনাকাটার চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু খাবার খাওয়াই আমার ইচ্ছা। কেনাকাটা করতে যেয়ে বুঝলাম আমাদের দেশের কাপড়ের মান আর অন্যান্য জিনিসপত্রের মান এর থেকে অনেক অনেক গুন বেশি ভালো। গ্যাংটকে আসলে আমার চোখে কেনার মতো ব্যতিক্রম কিছুই পড়েনি।
ঠান্ডার মধ্যে আইসক্রিম খাবার মজাই আলাদা। সবাই আইসক্রিম খেলাম সাথে বিভিন্ন রক্ম পেস্ট্রি। M.G.Marg e OASIS CAFE নামে একটি খাবার দোকান দেখতে পেলাম। অর্ডার করলাম স্পাইস মম। বেশ ভালোই খেতে। সিকিমে এই মমটাই খাবারের দিক থেকে বাংলাদেশ থেকে ভালো মনে হলো। আতিফ এবং নাসিফের জন্য জুতা কিনলাম কিন্তু নিজের জন্য জুতা পছন্দ হলেও সাইজ পাওয়া গেল না। ইতোমধ্যে রাত প্রায় ১০টা। বিদায় ঘণ্টা বাজছে বোঝা যাচ্ছে। M.G.Marg এ বসে আমরা মানুষের আসা যাওয়া দেখছি। আমার স্ত্রীর মনটা বেশ খারাপ বুঝতে পারলাম। হয়তো ভাবছে আবার আসা হবে কিনা? বললাম চলো হোটেলে …ইনশাআল্লাহ আবার আসবো।
পরেরদিন সকালে আমাদের যাত্রা আমার প্রিয় বাংলাদেশের পথে। খুব সকালে নিবিড় ভাই এসে বললেন হোটেলে ফুড ক্যাফেতে যেতে। এ যে আরেক স্বর্গ…আকাশ পরিস্কার …কাঞ্ছনজঙ্ঘা যেন তার অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে হাজির…মহান আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ দিলাম বিদায় মুহূর্তে এই অপরূপ দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য।
গাড়ি হাজির। হোটেল থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। শিলিগুড়ি পৌঁছে গেলাম সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই। এবার বিদায় নেবার পালা …নিবিড় ভাই এবং আপন ভাবী আমাদের পরিবারের মতোই ছিলেন। ওনারা চলে গেলেন চেংরাবান্ধা আর আমরা চলে আসলাম ফুলবাড়ি হয়ে বাংলাবান্ধা…।
আমাদের স্মরণীয় যাত্রার শেষ এখানেই…হয়তো আবার আসবো অন্য কোনো গল্প নিয়ে…আল্লাহ হাফেজ।

ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ
গিনি ডেন্টাল হোম
সিটি পলি ক্লিনিক
পুরাতন মেডিকেল রোড, বিভাগীয় প্রধান, ওয়েসিস হাসপাতাল, সিলেট