স্টাফ রিপোর্টার || হবিগঞ্জ জেলার সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ অঙ্গনের এক নিবেদিত প্রাণ সংগঠক সুভাষ চন্দ্র দেবের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী ২৪ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে পালন করা হয়েছে। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আশ্রবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা সুরেন্দ্র মোহন দেব ও মাতা সুধা রাণী দেব উভয়েই প্রয়াত। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭৬ সালের ১ মে বেলা রাণী দেব রায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সুভাষ দেব। তাদের একমাত্র সন্তান সৌরভ বিকাশ দেব। শিক্ষা জীবন শুরু হয় রাজারবাজার সরকারি এমভি স্কুলে। বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
স্বাধীনতার পর “এ্যাপেলো ইলেকট্রনিক্স” নামে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তবে তার মূল আকর্ষণ ছিল নাট্যজগৎ। মঞ্চ নাটকে তিনি আড়াল থেকেই কাজ করতে পছন্দ করতেন। বিশেষ করে দৃশ্যপট পরিবর্তনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবির ব্যবহার ছিল তার অভিনব প্রয়াস। হবিগঞ্জের মঞ্চনাটকে তার অবদান অনন্য। এ জন্য ১৯৯৭ সালে জীবন সংকেত নাট্যগোষ্ঠী থেকে আজীবন সম্মাননা, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নাট্য সম্মাননা এবং বাগ্মীনেতা বিপিন পাল চৌধুরী স্মৃতি সম্মাননা লাভ করেন।
তিনি সুরবিতান ললিতকলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রয়াস নাট্য সংস্থা ও খোয়াই থিয়েটারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নাটক ও রেডিও নাটকে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে অংশ নেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঃ আয়নায় বন্ধুর মুখ, দুই বোন, খাঁচা, ব্ল্যাক মার্কেট, সামনে যাই থাক, ট্রেইন চলবেই, ওরা কদম আলী, চারিদিকে যুদ্ধ, অনস্বীকার্য্য (বিদ্যুৎ কর রচিত), দেনা পাওনা, চারুলতা প্রভৃতি।
নাট্যকলার বাইরে সুভাষ দেবের সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডও সমানভাবে প্রশংসিত। হবিগঞ্জ বিজ্ঞান ক্লাব, বিজ্ঞান খেলাঘর, বর্ণমালা খেলাঘর আসর, হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হবিগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (হবিগঞ্জ ইউনিটের আজীবন সদস্য ও সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য), হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি (সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আজীবন সদস্য), হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি (সাবেক কার্যকরী পরিষদ ও আজীবন সদস্য), বিপিন চন্দ্র পাল স্মৃতি পাঠাগার ট্রাস্ট, হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতাল, হবিগঞ্জ রোটারী এডুকেশন ট্রাস্ট, কানাডা প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট, এবাদ আলী-খুরমান্নেছা চৌধুরী এডুকেশন ট্রাস্ট, ফেমা হবিগঞ্জ জেলা শাখা (সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট), পৈল গণকেন্দ্র পাঠাগার ট্রাস্ট, দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা সংস্কৃতি সংসদ, হবিগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি, ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশনসহ বহু সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।
১৯৯১ সালে তিনি রোটারী ক্লাব অব হবিগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যুক্ত হন। ক্লাবের প্রায় সকল কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নেন। ২০০৭-২০০৮ রোটারী বর্ষে এসিস্ট্যান্ট গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন শতভাগ উপস্থিতি দিয়ে তিনি ক্লাবের শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সুভাষ দেব সাধারণ খাবার পছন্দ করতেন, তবে মাংসের প্রতি ছিল অনীহা। ক্রীম রঙে ছিল তার আকর্ষণ। তিনি সবসময়ই বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুর পরও মানুষের মনে চিরকাল বেঁচে থাকা যায়।
২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার রাত ১২ টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর অষ্টম বর্ষপূর্তিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে স্মরণ করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন। হবিগঞ্জের সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন অঙ্গনে তিনি ছিলেন এক নিঃস্বার্থ সংগঠক, যার কাজ আজও সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
লেখক ঃ মো. আজহারুল ইসলাম চৌধুরী