স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ৩ বছরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি প্রকল্প, প্রাণিপুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, এলডিডিপি প্রকল্প, হাওর প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে বিগত সময়ে সরকারি প্রকল্পগুলোর নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা ও বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জুন মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মোস্তাফিজুর রহমান। যোগদান করার পরেই তিনি হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সাথে গড়ে তুলেন সখ্যতা। সাবেক এমপি আবু জাহিরের সাথে ভালো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নিজের ইচ্ছামত প্রাণিসম্পদ অফিস চালিয়েছেন তিনি। অফিসের কারো কথা শুনেননি। কেউ তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে করতেন হেনেস্তা। এখনো তার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত তারা। ২০২৪ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্প থেকে ৫৯ জন মোরগের পিজির সদস্যদের জন্য জনপ্রতি ২০ হাজার করে মোট ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু সদস্যদের মাঝে ওই টাকা বন্টন না করে তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে ওই সদস্যদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৫ হাজার টাকা করে পুনরায় ২লাখ ৯৫ হাজার বরাদ্দ দেন। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান ওই টাকাও কবজা করে ফেলেন। ২০২৪ সালের ২৮ মে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) কর্তৃক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে পিজিদের “এক্সপোজার ভিজিট” উদযাপন করার জন্য ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫শ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪লাখ ৭৪ হাজার ৫শ টাকা তিনি খরচ করেন। আর ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা তিনি আত্মসাত করেন। পিজির সদস্য হবিগঞ্জ শহরতলীর নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা আক্তার জানান, আমি ৩০ মাস ধরে পিজির সদস্য। আমি মাসে সদস্য চাঁদা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে ১শ টাকা করে সঞ্চয় দেই। তারা আমাকে মাসে ২শ টাকা করে দেন। কিন্তু আমি শুনেছি, আমাদের মোরগের ঘর বানানোর জন্য ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের কোন সদস্যদের ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেননি। নুরজাহান আক্তার জানান, পিজি প্রকল্প থেকে মাসে ২শ টাকা ছাড়া আমি অন্য কোন টাকা পাইনি। অথচ পিজি সদস্যদের মোরগের খামারের জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ঘর নির্মাণের জন্য কোন টাকা পয়সা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও গরুর খাবারের জন্য কোন টাকা পয়সা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সানাবই গ্রামের এখলাছ মিয়া জানান, শুনেছি আমাদের জন্য প্রতি বছর সরকার বরাদ্দ দেন। কিন্তু অদ্যবদি পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাইনি। শুধু তাই নয়, ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের খামারও কোনদিন পরিদর্শন করেননি। এছাড়া কোন প্রকার চিকিৎসাও দেননি। অভিযোগ রয়েছে, হাওর প্রকল্পের সদস্যদের অত্যন্ত নি¤œমানের ঘর দেওয়া হয়। এ ঘরগুলো ১/২মাস পর ভেঙ্গে যায়। হাওর প্রকল্পের (বিজি) সদস্য যারা হাঁস, মোরগ পালন করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাদের নিজেদের ইচ্ছামত ঠিকাদার নিয়োগ করেন। ঠিকাদার বরাদ্দের টাকায় নি¤œমানের ঘর তৈরী করেন। যা ব্যবহার যোগ্য নয়। সরকার ঠেকসইভাবে ঘরগুলো নির্মাণের নির্দেশ দিলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার যোগসাজসে বরাদ্দের টাকাগুলো হরিলুট হয়ে যায়। ইতিপূর্বে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় রক্ষা পান তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড় পরিমাণ অভিযোগ থাকলেও তিনি রয়েছে বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের দাবি জানান ভুক্তভোগী খামারীরা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) ডাঃ আব্দুল কাদের জানান, হবিগঞ্জ সদরে ক্লাইমেট স্মার্ট শেড নির্মাণে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। সেটি সঠিকভাবে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও অন্যান্য অনিয়মের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।