ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বছর ঘুরতে আবারও সেই মে মাসেই দেখা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। গত বছর ২৭ মে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক তা-ব চালায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। আম্ফান, মোখার মতো ঘূর্ণিঝড়ও আঘাত হেনেছিল মে মাসেই। বিগত পাঁচ বছরে ৭টি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের ৫টিই ছিল মে মাসে।
এবারও মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের পূর্বাভাস পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) শুরু হওয়ার আগে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রবণতা বাড়ে। নভেম্বর মাসে বর্ষা শেষ হয় অর্থাৎ মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়Ñএই ট্রানজিশন পিরিয়ডে আবহাওয়ায় অস্থিরতা তৈরি হয়, যা ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণত বর্ষার আগ মুহূর্তে সাগরে নিম্নচাপের আশঙ্কা প্রবল থাকে। নিম্নচাপটি হতে পারে মে মাসের ২৩ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে। এখন এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, সমুদ্রের উষ্ণতা, মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন ও বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মে মাস ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য অনুকূল। এ মাসের ২৩ তারিখে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। ২৫ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে যে কোনো দিন আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়। বিগত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য সময়।
তিনি আরও বলেন, এ মাসের ২৭ তারিখ অমাবস্যা হতে পারে। পূর্ণিমার রাতে সাগরে জোয়ারের উচ্চতা অনেক বেশি থাকে। ওই সময় যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন এটা ভয়ংকর হবে। তবে আশা করছি এর আগে সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সাধারণত মে মাসের ২০ থেকে জুন মাসের ১৯ তারিখের মধ্যে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে বর্ষা ঋতুর আগমন ঘোষণা করে। মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ সীমানায় এখন অবস্থান করছেন। এর আগেই ঘূর্ণিঝড়ের সিস্টেম তৈরি হয়। বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থা একটা সাইক্লনিক ঘূর্ণিবার্তার জন্য প্রস্তত হয়ে আছে, যা নিম্নচাপ অবস্থা থেকে ক্যাটাগরি-১ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের আদলে রূপ গ্রহণ করতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় শেষেই মে’র শেষ সপ্তাহে মৌসুমি বায়ুর অগ্রভাগ দেশের উপকূলভাগে এসে স্থলভাগের শুষ্ক বাতাসের সঙ্গে আন্তঃক্রিয়ায় প্রাক মৌসুমি বজ্রবৃষ্টি এবং খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই তথা জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বর্ষার আগমন ঘোষণা করতে পারে।
জানা যায়, বিগত পাঁচ বছরে সাতটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৪টি ছিল মে মাসে, বাকি ৩টি অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এসব ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হেনেছে। এসব ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ক্ষতির শিকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবশেষ ২০২৪ সালে ২৭ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশে আঘাত হানে। এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার। এর আগে ২০২৩ সালে তিনটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশে। ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলী’ পটুয়াখালী উপকূলে আঘাত হানে। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার। একই বছরের ১৪ অক্টোবর কক্সবাজারে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার।
এছাড়া ২০২০ সালের ২১ মে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার। ২০২১ সালে একই অঞ্চলে আবারও আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর বরিশালে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার।
ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরার আহ্বায়ক শরিফ জামিল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে প্রস্তুতি ও ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ৩টি স্টেজে স্থানীয় প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে। মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দুর্যোগের সময় শুধু ত্রাণ নয়, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান জরুরি। নইলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, সহনশীলতা কমবে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com