সুদখোর ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করতে আদালতের নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুদে টাকা দিয়ে দেনাদারের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করে ফেঁসে গেছেন সুদখোর ও তার পক্ষ নেয়া সরকারি কর্মচারি। সুদখোরের প্রতারণা আদালতে ধরা পড়ায় বিজ্ঞ বিচারক সুদখোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাটি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক আতর আলী তার চাচাতো ভাই সালাউদ্দিনকে বাদি করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারই সহকর্মী অফিস সহায়ক মধু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করান। ডিবি পুলিশের তদন্তে বিষয়টির সত্যতা না থাকায় তাদের মামলা খারিজ করে উল্টো বাদি ও সাক্ষির বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইন মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত দেন।
অভিযোগ ও ডিবির তদন্তে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের বাসিন্দা মৃত ছমেদ আলীর পুত্র আতর আলী ও সুন্দর আলীর পুত্র মধু মিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অফিস সহকারি হিসেবে কর্মরত। মধু মিয়া তার বোনের বিয়ের সময় টাকার প্রয়োজনে আতর আলীর নিকট থেকে বছরে ২৫ হাজার টাকা সুদ দেয়ার শর্তে ২ লাখ টাকা নেন এবং সুদের ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন আতর আলীর নিকট। বিনিময়ে মধু মিয়া সুদ ব্যবসায়ী আতর আলীকে তার স্বাক্ষরিত একটি খালি চেক প্রদান করেন। কিন্তু অবশিষ্ট ২০ হাজার টাকা ও মূল ২ লাখ টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় আতর আলী সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে ওই খালি চেকে ৫ লাখ টাকা লিখে তার চাচাতো ভাই সালাউদ্দিনের নাম দিয়ে তাকে বাদি করে চেক ডিজঅনার করান এবং মামলা করান। ডিবির তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় আতর আলী তার চাচাতো ভাই মোঃ ছমর উদ্দিনের পুত্র বাদী সালাউদ্দিনকে বাদী করিয়ে মধু মিয়ার বিরুদ্ধে জায়গা জমি ক্রয় দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দিলে আদালতে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে তিনি উল্লেখ করেন জমি ক্রয় বিক্রয়ের বিষয়ে বাদি সালাউদ্দিনের আনিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নেই। এ জন্য তিনি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় দ্যা পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ২১১ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা করেন।
মামলায় একজন ঠিকাদারসহ ডিসি অফিসের আরও দুই অফিস সহায়ক আদালতে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। উক্ত জবানবন্দিতে তারা দাবি করেন, মধু মিয়া ইতোমধ্যে ২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু আতর আলী উক্ত চেকে সালাউদ্দিনের নাম উল্লেখ করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে মামলা করিয়েছেন।
গত ২৪/০৯/২০২৩ইং তারিখ মামলার অভিযোগকারী সালাউদ্দিন নথি উপস্থাপনের দরখাস্ত দাখিল করে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে তার সমর্থনে জবানবন্দি প্রদান করেন। দরখাস্তে তিনি দাবি করেন, আসামী ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করায় আপোষ হয় এবং তিনি মামলা প্রত্যাহার চান। তিনি স্বীকার করেন, আতর আলী তার চাচাত ভাই হয়। কিন্তু আপোষনামা ফটোকপি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, স্থানীয়ভাবে আপোষ মীমাংসা হলেও ঘটনা বা লেনদেন সংক্রান্ত কোন সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। চেক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, চেকের তারিখ, টাকার অঙ্ক সহ চেক স্বাক্ষরকারীর লেখা ভিন্ন ভিন্ন কলমের কালি হয় এবং ভিন্ন লোকের লেখা হয়।
কিন্তু অভিযোগকারী সালাউদ্দিন জমি ক্রয় বিক্রয়ের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আতর আলীর পক্ষ হয়ে ঘটনা জানার পরও চেকের মধ্যে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে মিথ্যা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রতারণামূলক ভাবে টাকা দাবি করে মামলা দায়ের করেন।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বেও সুদের টাকার কারণে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নকল শাখার অসিম দাশ ও জেলা জজ আদালতের সেরেস্তাদার পিযুষ কান্তি দাশ দীর্ঘদিন আগে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা যান।
উক্ত বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে দ্যা পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ১৯৩, ২১১, ৪২০,৪৬৫,৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৩৪ ও ১০৯ ধারায় বিচারের নিমিত্তে অত্র আদেশকে নালিশ হিসাবে গণ্যক্রমে আমলী আদালত-০১ (হবিগঞ্জ সদর), হবিগঞ্জে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত দেন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন।