মাধবপুর প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু নিশাত রহমান নিলয় অপহরন মামলা নিয়ে চলছে নানা নাটকিয়তা। মামলার ২ জন স্বাক্ষী বিজ্ঞ আদালত কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশ ভয় দেখিয়ে তাদের কে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে। অপরদিকে থানা পুলিশ নিশাত অপহরন সঙ্গে যুক্ত আসামীদের নাম ও বেশ কিছু প্রমান অপহরনকারীদের মুক্তিপন দাবী করার বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবদেন দাখিল করেন। আদালত প্রতিবেদন টি গ্রহন করেন । পরবর্তীতে মামলাটি পূর্ন তদন্ত করার জন্য বাদি আদালতে আবেদন করলে আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ( ডিবি) কে দায়িত্ব দেন।
ডিবি পুলিশ ওই মামলায় ২ ব্যাক্তি কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। স্বাক্ষীদের জবানবন্দি সহ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু ওই ২ স্বাক্ষী বিজ্ঞ আদালত কে পরবর্তীতের জানিয়েছেন “ ডিবি পুলিশের হুমকিতে তারা মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়েছে”
মামলার সুত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গুনিয়াউক গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে নিশাত রহমান নিলয় (৮) ২০১৮ সালের ১৭ আগষ্ট বিকেলে তার মামা আশিকুর রহমান সিদ্দিকী খোকন ও আতিকুর রহমান রিপনের সঙ্গে মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর গরু বাজারে যায়। বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে নিলয় গরু বাজার থেকে তার মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়। সন্ধ্যা পযন্ত নিলয় তার মামার বাড়িতে পৌছে নি। আশিকুর রহমান সিদ্দিকী খোকন ও আতিকুর রহমান রিপন নিশাত রহমান নিলয় কে ধর্মঘর বাজার সহ আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে মাধবপুর থানায় একটি সাধারন ডায়রি (জিডি) করেন। জিডি নং-৮৬৫।
নিলয় নিখোজের খবর পেয়ে তার বাবা সৌদি প্রবাসী মশিউর রহমান ২০১৮ সালের ২০ আগষ্ট বাড়িতে চলে আসে। ছেলের খোজ খবর না পেয়ে ২০১৮ সালের ২৩ আগষ্ট মাধবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং- জিআর ২৭২/১৮)।
মামলাটি মাধবপুর থানায় হওয়ার পর থানার তৎকালিন এসআই লিটন কুমার ঘোষ মামলার তদন্তভার গ্রহন করে সরেজিমন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ।
এর মধ্যেই অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি বাদি কে ফোন দিয়ে নিলয়ের মুক্তিপন দাবি করেন।
এসআই লিটন ঘোষ অজ্ঞাত ব্যাক্তির মোবাইল ফোন নম্বর গুলির সিডিআর এর জন্য আবেদন করেন। র‌্যাব -৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের এসআই খোকন বওয়ালী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নোয়াপাড়া চা বাগানে অভিযান চালিয়ে জীবন পাল , ছায়েদ মিয়া, সাইদুল ইসলামের কাছ থেকে মুক্তিপন দাবি করার মোবাইল ফোন ২টি উদ্ধার করে । পরবর্তীতের আসামীদের থানায় প্রেরন করা হলে এসআই লিটন ঘোষ আসামীদের অপহরন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন এবং আসামীদের ৩ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞসাবাদ শেষে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। এসআই লিটন ঘোষ আদালতে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন।
কিন্তু বাদি মশিউর রহমান মামলাটি পুনরায় তদন্ত করার জন্য আবেদন করলে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) কে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ডিবির এসআই দেবাশীষ তালুকদার মামলাটি পুনরায় তদন্ত করেন। এসআই দেবাশীষ তালুকদার মাধবপুর উপজেলার মাল পুর গ্রামরে মোঃ রঙ্গু মিয়ার ছেলে মোঃ সজীব মিয়া কে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত ২০১৯ সালের ২২আগষ্ট সজিব মিয়ার জবাবন্দি গ্রহন করেন।
১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সজিব মিয়া মোছাঃ নুর নাহার বেগম , হালিমা আক্তার ঝুমা , মোঃ বিল্লাল , হাজী মোঃ জামাল উদ্দিন শাহ ওরফে জামাল কবিরাজ , জসিম মিয়া, মোস্তাক আহাম্মেদ ফয়সলের নাম প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে এসআই দেবাশীর্ষ তালুকদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার সাতাগাঁও গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া কে গ্রেফতার করে বিল্লাল মিয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত ২০১৯ সালের২৭ আগষ্ট বিল্লাল মিয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ঘটনার নতুন মোড় নেয় বিল্লাল মিয়া ও সজিব মিয়া যখন বলেন ডিবি পুলিশ তাদের হুমকি দিয়ে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছেন।
২০১৯সালের ১৫ অক্টোবর মোঃ বিল্লাল মিয়া তার আইনজীবির মাধ্যমে তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হবিগঞ্জ আমলী আদালত ৬ এ একটি আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন নিলয় অপহরন মামলার সঙ্গে সে জড়িত নয়। মামলার এজাহারেও তার নাম নেই। বাদি তাকে সন্দেহ করে না। তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজতে রেখে মামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে শাররীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তার শিখানো মতে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন।
একই ভাবে সজীব মিয়াও তার আইনজীবির মাধ্যমে জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হবিগঞ্জ আমলী আদালত ৬ এ একটি আবেদন করেন। সজীব মিয়াও উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজতে রেখে মামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে শাররীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তার শিখানো মতে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন।
এ ব্যাপারে ডিবির এসআই দেবাশীষ তালুকদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত করে যা প্রমান পাওয়া গেেেছ সে গুলো আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। হুমকি দিয়ে করো কাছ থেকে জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। নিলয় কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে সেটি এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে অপহরন মামলার চার্জশীট ভুক্ত ২ ও ৪ নং আসামী জামিনে রয়েছে।