নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয় এমপির ত্রাণ বিতরণের সমালোচনা করে পোষ্ট করায় কারাগারে গেলেন ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। পলাতক রয়েছে আরও ২ জন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। এ ঘটনায় এলাকায় মুখরোচক আলোচনার ঝড় বইছে।
সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারা দেশে করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউন চলছে। এমতাবস্থায় নিন্ম আয়ের মানুষজন ঘরমুখী হয়ে পড়ায় খাদ্য সংকটের কারনে বিপাকে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরমুখী লোকদের সাধ্যমতো খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন এবং ধণ্যাঢ্য পরিবারের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্যসমাগ্রী বিতরণ করে আসছেন। এই পরিস্থিতিতে নবীগঞ্জ-বাহুবলের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ গাজী উনার ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেন নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলার মধ্যবিত্ত যে সকল পরিবার খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে আছেন। অথচ লোকলজ্জার কারনে কারো কাছে কোন সহযোগিতা চাইতে পারছেন না। তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমার সাথে (এমপি মিলাদ) যোগাযোগ বা ফোন করলে অতি গোপনে আপনার বাসা, বাড়িতে সহযোগিতা পৌছে যাবে। ফেসবুকে এমন লেখা দেখে বা পড়ে মধ্যবিত্ত লোকদের মনে আশার সঞ্চার হয়। ফলে অনেকেই ফোনে যোগাযোগ করে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানান। প্রতি উত্তরে জানানো হয় অপেক্ষা করুন, রাতেই বাড়িতে পৌঁছে যাবেন ত্রাণ। এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় মুখরোচক আলোচনা। আউশকান্দি ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যক্তি এমপি মিলাদ গাজীর নম্বারে যোগাযোগ করে তাদের অভাব, অনঠন ও অসহায়ত্বের কথা জানান। তিনি তাদের আশ^স্ত করে রাতেই উনার লোকজন বাড়িতে সহায়তা পৌছে দিবে। শুরু হলো অপেক্ষার পালা। এমপির মিডিয়া পিএস মাহিবুর ফোনে ওই লোকদের জানান, তারা রাতেই ত্রাণ নিয়ে আসতেছে অপেক্ষা করতে। এই অপেক্ষা আর শেষ হয়নি। রাত প্রভঅত হলেও সেই ত্রাণ পৌছেনি। নির্ঘুম পরিবারের লোকজনের মাঝে হাতাশা দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পারেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক জাকির হোসেন। এই বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুন তাদের আইডি থেকে নি¤েœাক্ত স্ট্যাটার্স লিখেন। যেমন “ দয়া করে নোংরা রাজনীতি বন্দ করুন, কল করুন খাবার পৌছে দিব বাড়িতে, এসব ভাওতাবাজি বন্ধ করুন, অসহায় হতদরিদ্রদের নিয়ে আর খেলা করবেন না, দয়া করে এ সব বন্ধ করুন। আমার এলাকার বেশ কয়েকজন লোকের অভিযোগ বিগত ২০ দিন পুর্বে কল করেও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি কোন সহযোগিতা. অসহায় হতদরিদ্রদের আশা দিয়ে কেনো নিরাশ করা হচ্ছে ? অসহায়দের এই প্রশ্নের উত্তর আদৌও কেউ দিবেন কি ? এটা লিখেন মো. জাকির হোসেন, সাবেক সহ সম্পাদক হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। উক্ত লেখার প্রেক্ষিতে অনেকেই বিভিন্ন কমেন্ট ও শেয়ার করেন। আলোচনার ঝড় উঠে নবীগঞ্জের সর্বত্র। এ ঘটনায় গত ০৭/০৫/২০২০ইং তারিখে এমপি শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীর কম্পিউটার অপারেটর অলিউর রহমান ইমরান বাদী হয়ে জাকির হোসেন, গিয়াস উদ্দিন মামুন ও হাবিবুল্লা রুহেল এর বিরুদ্ধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(২)/২৯(১)/৩১(২)/৩৫ দঃবিঃ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ ওই মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। উক্ত মামলা দায়েরে ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যেখানে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় সরকার দলীয় লোক গ্রেফতার ও পলাতকের ঘটনায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জাকির হোসেন জানান, লোকজন ত্রাণ না পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে। সে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বললে সংসদ সদস্য তার মিডিয়া পিএস মাহিবুরের সাথে কথা বলতে বলেন। মাহিবুর গভীর রাত অবধি দারিদ্র লোকজনকে অপেক্ষা করতে বলে ত্রাণ নিয়ে রওয়ানা হয়েছে মর্মে জানায়। রাত প্রভাত হলেও ত্রাণ নিয়ে আসা হয়নি। দারিদ্র লোকজন সারা রাত নির্ঘুম অপেক্ষা করেও ত্রাণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এই বিষয়টি ফেসবুকে তোলে ধরা হয়। এ ঘটনায় দায়েরী মামলায় এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।