এক হাতে কাস্তি, অন্য হাতে পাকা ধানের আঁটি
জামাল মোঃ আবু নাছের, মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ এক হাতে কাস্তি, অন্য হাতে পাকা ধানের আঁটি। ক্ষেতের পাকা ধান কেটে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এই নারী। প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ার কারনে দ্রুত পাকা ধান ঘরে তুলতে ওই নারী নিজেই কাস্তে হাতে নেমে পরে ফসলে মাঠে। তার নাম ডলি প্রভা দেব রায়। তিনি মাধবপুর পৌরএলাকার নোয়াগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। তার বাড়ি উপজেলার আদাঐর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। গত রোববার নিজের ক্ষেতের পাকা ধান কেটে দেখিয়ে দিলেন নারীরাও পারে। নারীরা শুধু সংসারের কাজই করে না। নারীরা ক্ষেত খামারের কাজও করেত পারে।
হাওয়ার অঞ্চলে এখন ধান কাটার মৌসুম। আর করোনার পরিস্তিতিতে কৃষি শ্রমিকের এখন মারাত্মক সংকট। এক দিকে শ্রমিক না পাওয়া অন্যদিকে ক্ষেতের ধান পেকে যাওয়া ও বৈরী আবহাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পরেন তিনি। এ পর্যায়ে নিজে কাস্তি হাতে নিয়ে পাকা ফসলে মাঠে নেমে পরেন তিনি।
ডলি প্রভা দেব রায় বলেন ক্ষেতের ধান পেকেছে, শ্রমিক সংকট, আবহাওয়াও খারাপ। এ অবস্থায় কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। পাড়ার অনেক ছেলে বেকার রয়েছে। তাদেরকে অনুরোধ করি মুজুরির বিনিময়ে ধান কেটে দিতে। কিন্তু কেউই আর এগিয়ে আসেনি। তাই নিজেই নেমে গেলাম ধান কাটতে। ডলি প্রভা দেব রায় ১৯৮৫ সালে নোয়াগাও গ্রামে ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলো দেখাতে গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন বিদ্যালয়টি। মায়ের গহনা বিক্রিকরে বিদ্যালয়ে আসবা পত্র ক্রয় করেছেন সেই নারী। তার হাতে গড়া বিদ্যালয়টি এক পর্যায়ে বিদ্যালয়টি জাতীয়করন হয়। পরবর্তীতে সরকারী করন হয়। এ বিদ্যালয়টিতে কর্মরত আছেন ডলি প্রভা দেব রায়। ডলি বলেন এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আজ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, স্কুল কলেজ সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। আজ ৩৫ বছর পর ফসলে মাঠে পাকা ধান কেটে প্রমান করলেন নারীরা সবই পারে। ঘরে বাহিরে নারীরা অজয়।
ডলি প্রভা বলেন করোনার কারনে স্কুল বন্ধ। বাড়িতে অলস সময় যাচ্ছে। ক্ষেতের ধানও পেকে গেছে। শ্রমিক নেই। তাই নিজেই নেমে গেছি ফসলের মাঠে। তিনি বলেন নিজের ক্ষেতের ধান কাটা লজ্জার কিছুই নেই। অসৎ পথে সম্পদের পাহাড় গড়লেও আনন্দ নেই।