নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জের হাওরে শুরু হয়েছে ধান কাটা। লকডাউনের কারনে বাইরের শ্রমিক আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন কৃষকরা। তবে এবার ধানের দাম ভাল থাকায় হতাশা কমেছে কৃষকদের।
সোমবার সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি এলাকায় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে দেখা যায়, চলছে ধান কাটা। শ্রমিকরাও বজায় রাখছেন সামাজিক দূরত্ব। গেল কয়েকদিন আবহাওয়া খারাপ থাকলেও বর্তমানে প্রখর রোদ্রে সবাই কাজ করতে গিয়ে ঘেমে যাচ্ছেন। কেউ কাটছেন। আবার কেউ কাটা ধান আটি বাঁধছেন। পরে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন মাড়াইয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে।
হাওরে শুকুর মিয়ার জমিতে আবাদ করা ব্রি-২৮ ধান কাটা হচ্ছিল। শুকুর মিয়া জানান, বাহিরের শ্রমিকরা আসতে শুরু করেছে। ফোনে অনেকেই জানিয়েছে গাড়ি না পাওয়ায় তাদের আসতে কষ্ট হচ্ছে। তবে স্থানীয় লোকজন বেকার থাকায় তাদেরকেই কাজে লাগিয়েছি। অন্য সময় ধাওয়ালরা (ধান কাটার শ্রমিক) প্রতি বিঘায় নিত ৫ মন। এখন আমরা স্থানীয় শ্রমিকদের দিচ্ছি ৪ মন। এতেও শ্রমিকরা লাভবান হবে। কারণ গত বছর শুকানো ছাড়া ধান বিক্রি হত ৩৫০টাকা মন আর এবার বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা মন। আর শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা মন। আমরাও এবার লাভবান হচ্ছি।
এরশাদ মিয়ার জমিতে এবার আবাদ হয় জিংক যুক্ত ব্রি-৮৪ ধান। স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটানোর সময় নিজেও কাটছিলেন ধান। জাকির হোসেন সোহাগ লোকজন নিয়ে ধান কাটছিলেন নিজের জমিতে।
ধান কাটতে আসা ইমামবাড়ির খলিল মিয়া একজন সিএনজি-অটোরিক্সা চালক। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় ধান কাটতে এসেছেন। এখন ধান কাটতে না পারলে কিভাবে দিন কাটাতাম এই চিন্তায় ঘুম আসত না। আলমগীর, মর্তুজ মিয়া ও অলি রহমানও সিএনজি-অটোরিক্সা চালক। তারা জানান, বাইরের শ্রমিক না আসলে তারা সকলে মিলে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। মানুষ এখন কাজ না পেয়ে ঘরে বসে আছে। এই সুযোগে সবাই কিছু করে খেতে পারবে।
কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অলক কুমার চন্দ জানান, বাইরের শ্রমিকরা আসতে শুরু করেছেন। ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার অনেক শ্রমিক এসেছেন। তারা গভীর হাওরে চলে গেছেন। তবে এবার যেহেতু স্থানীয় লোকজন ঘরে বসে আছে তাই শ্রমিক সংকট হবে না। নির্ধারিত সময়েই ধান উঠানো যাবে। আর ধানের দাম ভাল থাকায় কৃষক এবং শ্রমিক উভয়ই লাভবান হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধানের দাম না পেয়ে এবার অনেকেই ধান চাষে আগ্রহ হারায়। অনেক জমি পতিত ছিল। তবে যাদের জমি পতিত ছিল তারা এখন আফসোস করছে। বর্তমানে আগাম আবাদকৃত ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮৪ ধান পেকেছে।
বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া, কাগাপাশা ও সুবিদপুর ইউনিয়নে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে আসা শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় শ্রমিকরাও ধান কাটতে শুরু করেছেন। পুকড়া ইউনিয়নের কাটখাল গ্রামে গেলে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু জমিতে ধান শুরু হয়েছে। আব্দুল আলী নামে এক কৃষক জানান, তার জমিতে কাজ করছেন ময়মনসিংহ থেকে আসা বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তাদের সাথে স্থানীয় শ্রমিকরাও কাজ করছেন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে আসা কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, অনেক কষ্টে তিনি এখানে এসেছেন। প্রতি বছরই আসেন। এবারও যখন যোগাযোগ করেছে, না বলতে পারিনি।
এদিকে ধান কাটার শ্রমিক সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। শ্রমিকদের জন্য ঘোষণা করেছে বিশেষ প্রণোদনা। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, হাওরের বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকট কমাতে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্প করার ব্যবস্থা করেছি। বাহির থেকে আসা শ্রমিকরা এখানে থেকে কাজ করবে। এর জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে ১০ কেজি চাল, ৩/৪ কেজি আলু, এক লিটার তেল, একটি সাবান এবং আধা কেজি ডাল প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে হাওর এলাকায় কিছু শ্রমিক এসেছে। আমরা তাদের কাছে এই সহায়তা পৌছে দিব।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় এ বছর হবিগঞ্জ জেলায় বোরো ধান আবাদ ১ লক্ষ ২০ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে। হয়েছেএর মাঝে গভীর হাওর রয়েছে ৪৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর। কয়েকদিন যাবৎ শুরু হয়েছে ধান কাটা।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় এ বছর হবিগঞ্জ জেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে। এর মাঝে গভীর হাওর রয়েছে ৪৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর। কয়েকদিন যাবৎ শুরু হয়েছে ধান কাটা।