স্টাফ রিপোর্টার ॥ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর চৌধুরী বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রানা মিয়া ও এএসআই কালামের মহানুভবতায় অবশেষে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা হলো মানসিক প্রতিবন্ধী জীবন মিয়ার।
গত ৩০ মার্চ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ভবঘুরে জীবন মিয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সংবাদটি নজরে আসে চৌধুরী বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রানা মিয়ার। তিনি বিষয়টি হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাসুক আলীকে জানান। তখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুক আলী এএসআই রানা মিয়াকে জীবন মিয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় এএসআই রানা মিয়া হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজারস্থ নূরুল হেরা মসজিদের পাশে অবস্থানরত মানসিক প্রতিবন্ধী জীবন মিয়াকে খোঁজে বের করেন এবং তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু করোনাভাইরাস আক্রান্ত ভেবে অনেকেই জীবন মিয়ার কাছে যেতে রাজি হননি। কোন প্রস্তুতি না থাকায় এএসআই রানা মিয়া সেখান থেকে ফাঁড়িতে ফিরে যান এবং সেখান থেকে তিনজন সুইপার নিয়ে পুনরায় ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু জীবন মিয়ার অবস্থা ও পারিপাশির্^ক পরিবেশ পরিস্থিতি এতটাই নোংরা ছিল যে দুইজন সুইপার সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে এএসআই রানা মিয়ার অনুরোধে একজন সুইপার জীবন মিয়াকে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসে এবং একটি পিকআপ ভ্যানে করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যদিও হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়াটা খুব একটা সহজ ছিল না। হাসপাতালের ইমার্জি বিভাগে দায়িত্বরত কেউই জীবন মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে এগিয়ে আসেননি। জীবন মিয়া মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইলে তারা তাকে করোনা আক্রান্ত বলে দাবি করেন। শেষে এএসআই রানা মিয়া বাধ্য হয়ে হাসপাতালের আরএমও-কে ফোন করে বিষয়টি অবগত করলে আরএমও হাসপাতালে দায়িত্বরতদের জীবন মিয়াকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করার নির্দেশ দেন। তখন তারা জীবন মিয়াকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার প্রতিবেদক খবর পেয়ে সাথে সাথে হাসপাতালে যান জীবন মিয়াকে দেখতে। হাসপাতালে জীবন মিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। পাশাপাশি চৌধুরী বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে এএসআই রানা মিয়া ও এএসআই কালামের সাথে দেখা করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এদিকে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ সাগর আহমেদ শামীম আয়ারল্যান্ড থেকে মোবাইল ফোনে মানসিক প্রতিবন্ধী জীবন মিয়ার খোঁজ নেন এবং হাসপাতালে ভর্তি বিষয়টি জানতে পেরে তিনি এএসআই রানা মিয়া ও এএসআই কালামকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। শামীম আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় এমন হাজারো জীবন মিয়া অলিতে গলিতে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সরকারের দায়িত্বশীলসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজ নিজ জায়গায় থেকে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে আহবান জানিয়েছেন তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আয়ারল্যান্ড প্রবাসী মোঃ সাগর আহমেদ শামীম। যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন যেন স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের এলাকার মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখেন।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আয়ারল্যান্ড প্রবাসী মোঃ সাগর আহমেদ শামীম সীমিত সময়ের জন্য দেশে এসেছিলেন। তখন তিনি নিজেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মানসিক প্রতিবন্ধীদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসা এবং খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। দেশে থাকাকালীন সময়ে তিনি নিজেই প্রতিবন্ধীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন।