বরফের রাজ্য সিকিম ভ্রমণ ১

ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ

২০১৭ সালে পবিত্র শবে কদরের রাতে ফজরের নামাজের পর মোনাজাতরত অবস্থায় আমার বড় ছেলে আতিফ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল “আব্বু তুমি কি আমাকে বরফের পাহাড় দেখাতে নিয়ে যাবে?” ওই মুহূর্তে আমি আতিফের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ…ওর মায়াবী চোখ আমার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করছে। আমার তখন আতিফের জন্মের সময়কার মনে পড়ে গেল। ২০১০ সালের ২০শে মে কি বৈরী আবহাওয়াই না ছিল সেদিন। আমি কিছু না ভেবেই ছেলেকে বললাম অবশ্যই তোমাকে নিয়ে যাব আমি বরফ দেখাতে। ছেলের কাছে ওয়াদা করার পর কতদিন কত রাত চলে গেল কিন্তু বরফের পাহাড় আর দেখানো হচ্ছে না ছেলেকে। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম গেলে এখনি না হলে আর নয়। ডিসেম্বর ২০১৯ থেকেই মানুসিকভাবে আমার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে প্রস্তুত হতে বললাম। স্ত্রী জিজ্ঞেস করল কোথায় যাব আমরা? আমি বললাম সিকিম। সিকিম নামটা শুনেই আমার স্ত্রী এমনভাবে আঁতকে উঠলেন যেন আমি কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছি!! আরও বললেন ছেলেদের প্রতি আমার কোনো মায়া দয়া নেই, এই ঠান্ডায় কেন যাচ্ছি!!! আমার মাথাও খারাপ হয়ে গেছে। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়। গেলে সিকিম না হলে যাত্রা বাতিল। শেষমেশ মহামান্য স্ত্রী রাজি হলেন বটে কিন্তু আমার বাবা মা বেকে বসলেন। কিছু শংকা, কিছু সাহস এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে ২০শে জানুয়ারি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর কল্যাণপুর হতে শ্যামলী এন.আর হুন্দাই বাসে করে রওনা হলাম বাংলাবান্ধা বর্ডারের পথে।
সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা পর যখন বাংলাবান্ধা পৌঁছলাম তখন মনে হচ্ছিল নতুন জীবন পেয়েছি কারণ পুরো যাত্রায় একবিন্দু ঘুমাতে পারিনি। ঘুমাতে না পারার কারণ ছিল অনেক। এর মধ্যে অন্যতম কারণ সারা রাস্তা ছিল কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বাস ড্রাইভার সাহেবকে ধন্যবাদ দিতেই হয় ওনার বিচক্ষণ ড্রাইভিং এর জন্য। বর্ডারে ইমিগ্রেশনে সব মিলিয়ে লেগেছে ১ ঘণ্টা। ফুলবাড়ি পৌঁছে ছোট মাইক্রোতে চড়ে গেলাম শিলিগুড়ি। এখানে একটি কথা বলতেই হয় আমার পরিবারের সাথে ছিলেন এক তরুণ দম্পতি। তাদের পাসপোর্টে এন্ট্রি ছিল চেংরাবান্ধা বর্ডার। ফলে ওই তরুণ দম্পতি আমাদের সাথে শিলিগুড়ি আসতে পারেননি। পরে তারা চেংরাবান্ধা বর্ডার হয়ে পরের দিন আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের কষ্ট দেখে আমি এবং আমার স্ত্রী দুই জনেরই খুব খারাপ লাগেলও আসলে আমাদের করার কিছুই ছিল না।
শিলিগুড়ির হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে পৌঁছে গেলাম দুপুর ২টা নাগাদ। আগে থেকেই টয়োটা ইনোভা ৭ আসনের গাড়ি অপেক্ষমান থাকায় গাড়িতে উঠে রওনা হলাম গ্যাংটকের পথে। ক্লান্ত থাকলেও ছেলেদের খুশি দেখে ক্লান্তিভাব অনেকটাই কেটে গেল।
নয়নাভিরাম পাহাড়, নীল পানির রাশি আর কিছু উদ্যমী তরুণ তরুণীদের রিভার র‌্যাফতিং দেখতে দেখতে বিকাল ৫টা৩০ নাগাদ পৌঁছে গেলাম সিকিমের দ্বারপ্রান্তে (WELCOME TO SIKKIM)।
সিকিমে প্রবেশ করার পূর্বে সেখানকার কাস্টমস অফিস থেকে অনুমতি নেবার জন্য গেলাম কিন্তু বিধিবাম। অনুমতি নিতে হলে ছবি, পাসপোর্ট ফটোকপি এবং ভিসার ফটোকপি প্রয়োজন। কিন্তু আমি ভুলক্রমে ভিসার ফটোকপি আনতে ভুলে যাওয়ায় নতুন করে ফটোকপি করে অনুমতি নিতেই ১ ঘণ্টা শেষ।