ডেস্ক রিপোর্ট ॥ মাগুরার আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। তাছাড়া বাকি ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে হিটু শেখকে মৃত্যুদ- ও ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন তিনি। অভিযোগ গঠন বা বিচার শুরুর ২৫ দিনের মাথায় আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিশু আছিয়ার স্বজনরা। তাদের দাবি, হিটু শেখকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলেও বাকি আসামিরা ধর্ষণ ও হত্যায় সহায়তা করেছে। তাদের খালাসে ন্যায়বিচার হয়নি।
শিশুটির মা বলেন, এই মামলায় আলামত নষ্ট ও হত্যাকা-ের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ৪ আসামির শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। তদন্তে গাফিলতির কারণে একজনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা যথাযথ ন্যায়বিচার নয়। আদালতের পর্যবেক্ষণে বিষয়গুলো আরও স্পষ্টভাবে উঠে আসা প্রয়োজন ছিল।
অপরদিকে, দ-প্রাপ্ত হিটু শেখের মেয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ, ভালো আইনজীবী নিতে পারিনি। সরকারিভাবে যে আইনজীবী দেওয়া হয়েছিল, তিনিও আমাদের পক্ষে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি। আমার বাবা, মা ও ভাইদের অন্যায়ভাবে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সামাজী বলেন, মামলার সকল কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে এবং প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই করেই আদালত রায় দিয়েছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হিটু শেখের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। এই রায় একটি দৃষ্টান্ত, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু বা নারী এমন পাশবিক নির্যাতনের শিকার না হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দ-বিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
৬ মার্চ ঘটনার দিন থেকে গণনা করলে ৭৩ দিনের মাথায় এ মামলার রায় ঘোষণা হয়।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com