বিএসএফ বিজিবিকে জানিয়েছে ভারতে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে জহুর আলী হার্টএ্যাটাকে মারা গেছেন ॥ বাংলাদেশে পুনরায় পোস্ট মর্টেম ছাড়াই দাফন
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে উদ্ধার হওয়া জহুর আলীর লাশ হস্তান্তর করেছে দেশটির খোয়াই থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বাল্লা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে চুনারুঘাট থানা পুলিশের কাছে ত্রিপুরার খোয়াই থানা পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ৫৫ ব্যাটালিয়নের বাল্লা বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল ইসলাম, চুনারুঘাট থানার ওসি তদন্ত শফিকুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। ভারতের পক্ষে ছিলেন ১০৪ নং ব্যাটেলিয়ান বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার কুন্দুন কুমারসহ তার টিম, খোয়াই থানার ওসি সুবীর মালাকার, ইন্সপেক্টর যুগল ত্রিপুরা, খোয়াই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রঙ্গলাল দেববর্মা।
বিজিবি জানায়, গত ৬ জানুয়ারি ভারতের অভ্যন্তরে নিহত বাংলাদেশী নাগরিক মোঃ জহুর আলী (৫০) এর মৃতদেহ হস্তান্তর/গ্রহণের জন্য ৯ জানুয়ারি বাল্লা কোম্পানীর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা সীমান্ত পিলার ১৯৬৪/৪-এস হতে ৫ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (জিআর-৬২৬৬৪২ এমএস ৭৮পি/১২) বাল্লা আইসিপি নামক স্থানে কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্বে দেন বাল্লা কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মোঃ নাজমুল হোসেন এবং বিএসএফ এর পক্ষে নেতৃত্ব দেন স্টেনলি বিএসএফ কোম্পানী কমান্ডার ইনেসপেক্টর কুন্দুন কুমার। পতাকা বৈঠকে বিজিবির সদস্য ৬ জন, বিএসএফের সদস্য ৬ জন, বাংলাদেশী পুলিশ সদস্য ৫ জন এবং ভারতীয় পুলিশ সদস্য ৬ জনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে নিহতের ছেলে অলি মিয়া (২০) লাশ সনাক্ত করে। পরবর্তীতে খোয়াই থানা পুলিশের নিকট হতে চুনারুঘাট থানা পুলিশ মৃতদেহ গ্রহণ করে। মৃতের ছেলের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পুনরায় লাশের ময়না তদন্ত ছাড়া পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজিবি আরো জানায়, বিএসএফের নিকট থেকে তারা জানতে পেরেছেন, জহুর আলীর হার্টে ব্লক ছিল, তিনি হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার তার পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। পোস্টমর্টেম এর অফিসিয়াল রিপোর্ট পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। মৃত্যুর বিস্তারিত কারণ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে জানা যাবে বলে বিএসএফ বিজিবিকে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুলনা গ্রামের মুনছুব আলীর ছেলে জহুর আলী (৫০) শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন রবিবার দুপুরে খবর আসে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমার গৌড়নগর এলাকায় জহুর আলীর লাশ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার ১৯৬৮ নং পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে একটি ঘরের সামনে তার লাশ দেখে স্থানীয়রা ভারতীয় বিএসএফকে খবর দেয়। পরে বিএসএফ লাশ উদ্ধার করে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার খোয়াই থানা হাসপাতালে তার ময়না তদন্ত শেষে বাংলাদেশে নিহতের ছেলে অলি হাসানের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
এদিকে সন্ধ্যায় তার লাশ বাড়িতে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আত্মীয়স্বজনরা। শোকের মাতম চলে বাড়িসহ আশপাশের এলাকায়। রাত ৮টায় নিজ গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীসহ এলাকার লোকজন জানাজায় অংশ নেয়।
নিহতের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন জানান, তার স্বামী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি ৫ দিনের ছুটি নিয়ে ৫ জানুয়ারি বাড়িতে আসেন। ঢাকা থেকে আসার সময় গ্রামের হাট-বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে জহুর আলী অল্প মূল্যে কিছু লুঙ্গি কিনে নিয়ে আসেন। সেগুলো নিয়ে তিনি সোমবার বাড়ি থেকে বের হন। এসময় তিনি ঘরে থাকা ১১ হাজার টাকা সাথে করে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে চুনারুঘাটের বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার লোকজন ভারতীয় সীমান্তের গৌরনগর এলাকায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
জহুর আলীর ছেলে অলি হাসান জানান, তার ধারণা টাকার জন্যও কেউ তার বাবাকে হত্যা করে থাকতে পারে। তার পিতার সাথে থাকা ১১ হাজার টাকা ও ৮টি লুঙ্গি পাওয়া যায়নি।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com