স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচং উপজেলার বক্তারপুর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারির মধ্যে ২০ জনেরই নিয়োগ অবৈধ বলে অভিযোগ উঠেছে। কারও বিএড সনদ অগ্রহণযোগ্য, কারও নিয়োগে নেই কমিটির অনুমোদন, আবার কেউ পুরুষ হলেও মহিলা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, জাল সার্টিফিকেটে চাকরি পেয়েছেন একাধিক কর্মচারিও।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্তকৃত) মো. কামাল হোসেন বলেন, দুই বছর আগে অডিটে শিক্ষকদের নিয়োগ অবৈধ এবং নিয়োগের পর থেকে তাদের বেতন ভাতার সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যাদের নিয়োগই অবৈধ তারা কিভাবে এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন তা তার বোধগম্য নয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে তাদের কাছ থেকে বেতন ভাতার টাকা ফেরত না নিয়ে উল্টো এখনও বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৪ সালে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। কলেজে উন্নীত হয় ২০১৫ সালে। বিদ্যালয়টিতে মোট ১৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ২ জন কলেজ শাখায়। মোট কর্মচারি আছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে ১৫ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারির নিয়োগ অবৈধ। তাদের মধ্যে বিএড সনদ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুল তাজের নিয়োগ অবৈধ বলে অডিটে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগ পরিক্ষায় একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) মো. হামিদুর রহমান, সহকারি শিক্ষক হরিপদ দাশ এবং সহকারি শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ দাশের নিয়োগও অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বিজয় কৃষ্ণ দাশ জুনিয়র শিক্ষক পদে যোগদান করলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল মাধ্যমিক শিক্ষক। নিয়োগ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই তাকে নিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক। সহকারি শিক্ষক হরিপদ দাশ যোগদান করেন জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে। বিধান না থাকা সত্ত্বেও তাকে সহকারি শিক্ষক করা হয়। পূরণযোগ্য মহিলা কোটার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় সহকারি শিক্ষক (ধর্ম) হাবিবুল্লাহ, সহকারি শিক্ষক (কৃষি শিক্ষা) আবদুর রহমান ও সহকারি শিক্ষক মো. মেহেদী হাসান মানিককে। সহকারি শিক্ষক মো. হুমায়ন কবির দারুল ইহসান বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি নেন। অথচ বিশ^বিদ্যালয়টি ২০১৬ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কোন পত্রিকায় দেয়া হয়েছে তা উল্লেখ নেই। তাই তাদের নিয়োগও অবৈধ। এছাড়া সিনিয়র শিক্ষক মো. মাসুদ মিয়া, সহকারি শিক্ষক জ্যোৎস্না রানী রায়, সহকারি শিক্ষক মো. আইয়ূব আলী, সিনিয়র শিক্ষক মো. মাসুদ মিয়া, কলেজ শাখায় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মোশাররফ হোসেন তালুকদার। কর্মচারিদের মধ্যে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুর রকিব, আয়া রুবনা বেগম, নৈশ প্রহরী জাহিদ হাসান জয়, দপ্তরী অপু চন্দ্র মালাকারের নিয়োগও অবৈধ। নিয়োগের পর থেকে তাদের বেতন ভাতার পুরো টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। তাদের মাঝে ৫ জন শিক্ষকের ২০২২ সালের ২০ জুন (অডিটের সময়) ও তৎপরবর্তী পর্যন্ত দেয়া বেতন ভাতার টাকা ফেরত দেয়ার সুপারিশ করা হয়। সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল তাজের (প্রতি মাসে ৩৫ হাজার ৭শ’ করে) ৭১ হাজার ৪০০ টাকা, সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) মো. হামিদুর রহমানের ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ২৫৫ টাকা, সহকারি শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ দাশের ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৮ টাকা ও সহকারি শিক্ষক হরিপদ দাশের ২১ লাখ ১২ হাজার ৯৪৪ টাকা, সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ আইয়ূব আলী ৪ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা ফেরত দেয়ার সুপারিশ করা হয়। একই সাথে ২০২২ সালের জুন মাসের পর থেকে যে বেতন ভাতা তারা নিয়েছেন তাও ফেরত দিতে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া সঠিক ও নির্ভুল তথ্য না দেয়ায় রাজস্ব ভ্যাট বাবদ ১৩ লাখ ৬১ হাজার ৭২৮ টাকা, অভ্যন্তরীন পরীক্ষা উৎস আয়কর ভ্যাট বাবদ ২ লাখ ৯০ হাজার ১১৩ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।