মুক্তিযুদ্ধকালে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য ॥ ১১ দফা ও ৬ দফা আন্দোলনে বৃন্দাবন কলেজের ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হবিগঞ্জ শহরের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব মোঃ শরীফ উল্লাহ আরো বলেন- মুক্তিযুদ্ধকালে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ১১ দফা, ৬ দফা আন্দোলনে বৃন্দাবন কলেজের ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। আগ্রহীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মোত্তালিব ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি নিজে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে প্রায় আড়াইশ ছাত্র তালিকাভূক্ত হয় প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য। তখনকার সময়ে প্রশাসনের কোন অ্যাক্টিভিটি ছিল না। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ভূমিকা নিয়ে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতো। ওই সময়ে হঠাৎ একদিন ১১ দফা দাবিতে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে মুসলিম লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট বারীর কোর্ট স্টেশন এলাকাস্থ বাসায় হামলা চালায়। পরে প্রশাসনের সাথে পরামর্শক্রমে ছাত্র নেতৃবৃন্দ অ্যাডভোকেট বারী ও তার পরিবারের সদস্যদের আন্দোলনকারীদের রোষানল থেকে সেভ করেন। রাতে পুলিশের সাথে সহযোগিতা করে তাদের পুরো পরিবারকে সিলেট পাঠানো হয়। পরে হবিগঞ্জ জালাল স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক সংগঠন ‘ডাক’ এক সভা আহবান করে। ওই সভায় প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এই সভাকে তখনকার সময়ের হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় সভা হিসেবে গণ্য করা হয়। সভায় ছাত্রসমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সকল স্তরের লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। সভায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ছাত্রসমাজ সবাই যুদ্ধে যেতে সম্মত হয়। কিন্তু যুদ্ধের জন্য অস্ত্র প্রয়োজন। আর সেই অস্ত্র কারো কাছে ছিল না। তাই ১১ দফা ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ সবাই পরামর্শ করে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আলী আকবর খান এর কাছে যান। সকলেই যুদ্ধের জন্য ট্রেজারী থেকে সংরক্ষিত অস্ত্র দেয়ার আহবান জানালে আলী আকবর খান ট্রেজারী থেকে অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেন। আগ্রহীরা যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে বিডি হল (বর্তমান আরডি হল) প্রাঙ্গণে এক সভায় মিলিত হন। সভায় মেজর জেনারেল এমএ রব, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ, এমএলএ মোস্তাফা আলী, মোঃ মতিন মিয়া, মোঃ আনজব আলী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভার উপস্থিত ছাত্র জনতা, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সিলেট যাবার পথে সাদিপুরে তারা সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ওই যুদ্ধে হাফিজ উদ্দিন ওরপে কলার বাপ, মফিল হোসেন শহীদ হন। তাছাড়া পাঞ্জাবীরা হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্পটে চলে আসলে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে প্রতিবেশি দেশ ভারতের খোয়াই যাওয়ার পথে পাঞ্জাবীদের হাতে শহীদ হন ডা. সালেহ আহমেদ, দেয়ানতরাম সাহার বাড়ির হিরু রায় সহ অনেকে। তাদেরকে এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাঞ্জাবীরা নির্মমভাবে হত্যা করে।