মহানবী ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে ॥ আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে নিয়ে কটূক্তির অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত সজীব দাস ও ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে পুলিশের হাতে আটক রাজু কৈরীর শাস্তি নিশ্চিত না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন ইসলামী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ হবিগঞ্জ গ্রেপ্তারকৃতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে। পরিষদের সভাপতি আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সালেহ সাদী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা লোকমান সাদী, সহঃ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাবের আল হুদা চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী বলেন, ইসলাম ধর্ম পরধর্মসহিষ্ণু। অন্যের ধর্ম পালনে ইসলাম ও মুসলমান কখনো বাঁধার সৃষ্টি করে না। এটা ইসলামের শিক্ষা। এ কারণে শতকরা নব্বই ভাগেরও অধিক মুসলমানদের এই দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠী পূর্ণ নিরাপত্তা ও নির্ভয়ে বসবাস করতে পারছেন। পক্ষান্তরে প্রতিবেশী হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে প্রায়ই সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র দেখা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের মুসলমানদের সহনশীলতার সুযোগে প্রায়ই অমুসলমানদের দ্বারা আমাদের নবী ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করতে দেখা যায়। কাজেই এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। আমাদের ধর্ম ও জানের চেয়ে প্রিয় নবীকে নিয়ে কটূক্তি করলে আমরা ঘরে বসে থাকবো না। তাই আজ আমাদের দাবী একটাই, কটূক্তিকারীদের ফাঁসি দিতে হবে এবং এ ব্যাপারে অবিলম্বে আইন পাশ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সালেহ সাদী বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবীতে এই মানববন্ধন। সুতরাং বিচার নিষ্পন্ন হওয়ার আগে আসামীদেরকে জামিন দেওয়া হলে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দিতে আমরা বাধ্য হবো। পরে তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৯টি দাবী উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো- ১. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তিকারী গ্রেপ্তারকৃত সজীব দাসের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি। ২. আমরা মনে করি কুলাঙ্গার সজীব দাস ও রাজু কৈরী একা নয়, তার এসব কর্মকা-ের মূল হোতা এবং চক্রকে খোঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৩. সজীব দাস ও রাজু কৈরীর ঘৃণিত ও সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টকারী এসব কটূক্তির অপরাধে রাষ্ট্রবাদী মামলা করতে হবে। ৪. শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে কোন অবস্থাতেই জামিন দেওয়া যাবে না। ৫. আমরা মনে করি, দেশের চলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা কেন্দ্রিক পতিত স্বৈরাচারের নীল নকশা বাস্তবায়নের যে অপচেষ্টা চলমান এর সাথে এই দু’জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ৬. একই সাথে মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে পতিত স্বৈরাচারের যাবতীয় দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৭. বিশেষ করে কিছু কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর বিক্ষিপ্ত আক্রমণ করে এই চক্রটি দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চায়। আবার একই চক্র ও কিছু স্বার্থপর সুযোগ সন্ধানী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাজার-দরগার উপর আক্রমণ করে যাচ্ছে। দেশের প্রশাসনের কাছে আমরা এ সকল নাশকতামূলক কর্মকান্ড ও দেশ বিরোধী চক্রান্তের নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের দৃষ্টাতমূলক শাস্তি দাবী করছি। ৮. উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন সংখ্যালঘুর ঘরবাড়ির উপর কিংবা কোন ব্যক্তির উপর যেন কোন ধরণের আক্রমণ না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগ কামনা করছি। ৯. দেশের মাজারে যাবতীয় কুফুরী, শিরকী, বেদাতী, বেহায়াপনা ও কুসংস্কারমূলক কর্মকান্ড, গান বাজনাসহ মদ গাঁজা ও জুয়ার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানাচ্ছি।
পরে উক্ত দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে দাখিল দেয়া হয়। মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন- সহঃ সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক শাইলগাছী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান মানিক, ব্যকস সভাপতি আলহাজ্ব সামছুল হুদা, সহঃ সাধারণ সম্পাদক ক্বারী আব্দুল হালিম, দৌলতপুর বাহুবল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হাই বাহুবলী, সংগ্রাম পরিষদের হবিগঞ্জ পৌরশাখা আহবায়ক মুহিব উদ্দীন আহমেদ সোহেল, পৌরশাখা সদস্য সচীব মাওলানা নোমান আহমদ, সদর উপজেলা শাখা সদস্য সচীব মাওলানা সাইদুর রহমান, লাখাই উপজেলা শাখা সদস্য সচীব মাওলানা আব্দুল লতিফ, জেলা সদস্য মুফতী তাফাজ্জুল হক প্রমূখ।