এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৪৮০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে ॥ সরকারি গোডাউনে ধান সরবরাহ করলে বেশি লাভবান হবেন কৃষক
চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাট উপজেলায় শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাজিউতা সহ কয়েকটি ইউনিয়নে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে ধান কাটছেন। কেউ কেউ ধান ঘরে তুলছেন। কৃষকের আঙিনায় ধান মাড়াইও ছলছে পুরো পল্লী অঞ্চলে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহিদুল ইসলাম জানান, চুনারুঘাটে বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। এবার ফলনও বেশ ভালোই হয়েছে। এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। তবে তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২৮০ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৪৮০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে নতুন ধান ঘরে তুলতে নেমেছেন মাঠে মাঠে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। তবে তাপদাহের কারণে কষ্ট হচ্ছে বেশি।
কৃষক মধু মিয়া জানান, অতিরিক্ত গরমে কৃষি জমিতে বেশি পরিমাণ সেচ দিতে হয়েছে। ডিপ টিউবওয়েলগুলোতে পানি কম উঠায় কৃষকদের দিনরাত জেগে পানি দিতে হয়েছে। মিরাশি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রমিজ উদ্দিন জানান, ৮৯ ও ২৯ জাতের ২০ একর জমি আবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু কিছু জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে বিপাকে পড়েছেন। পোকার আক্রমণে তিনি সহ এ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অনেক কৃষকের ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে করে ধানের ফলন কমে যাবে। তবে বিঘাপ্রতি এবার ধানের ফলন হচ্ছে ২০-২৫ মনের মধ্যে। এই ফলনও কম নয়। এবার বোরো মৌসুমে ধানের সরকারি মূল্য ১ হাজার ২৮০ টাকা হওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন এই কৃষক। আলমগীর হোসেন নামে এক কৃষক জানান, সকল প্রকার সারের দাম বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ধানের আবাদের খরচ বেড়ে গেছে এবার। তবে ধানের দাম ভালো পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ সুমন মিয়া বলেন, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে ব্রি-৮৮ ও ব্রিধান ১০০ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে তার ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলন বেশ ভালই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপজেলার মিরাশি ইউনিয়নের পরাজার গ্রামের কৃষক মো: আকছির মিয়া জানান, ব্রিধান ৮৯, ৯৬, বঙ্গবন্ধু ১০০, বিনা ২৫ জাতের ধান ৭৫ খের জমিতে লাগিয়েছেন তিনি। খেরপ্রতি খরচ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। প্রতি খেরে ধানের ফলন হচ্ছে ২২ থেকে ২৭ মনের মধ্যে। এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাজিউতা গ্রামে বোরো ধানের কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুনারুঘাট উপজেলার নবাগত ইউএনও আয়েশা আক্তার। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মাহিদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম মাহবুব, প্রাণিসম্পদ অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম, পিআইও প্লাবন পাল।
ইউএনও আয়েশা আক্তার বলেন, উপজেলায় এবার বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহিদুল ইসলাম বলেন, ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ ভাগ ধান পরিপক্ক হয়েছে। তাপদাহের কারণে জমিতে পানি বেশি লেগেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ৪৮০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। আশা করা যায় কৃষকরা যথাসময়ে তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবে এবং এবার বোরো ধানের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা। কৃষকরা সরকারি গোডাউনে ধান সরবরাহ করলে এবার বেশি লাভবান হবেন।