পূবালি ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ও সাংবাদিকের বাসায় স্প্রে নিক্ষেপ ॥ ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রীসহ ৬ জন অসুস্থ ॥ উপজেলা প্রশাসনের আশ^াসে মানববন্ধন প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় চেতনানাশক ছিটিয়ে লোকদের অচেতন করে চুরির ঘটনায় ডাকা মানববন্ধন প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৭ দিনের সময় চাইলে মানববন্ধন প্রত্যাহার করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিকালে শায়েস্তাগঞ্জের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যারাতে শায়েস্তাগঞ্জ ওয়ার্কশপ এলাকায় অপরিচিত সন্দেহভাজন এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খায়রুল আলম তার ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি লাইভ করেন। তিনি বলেন- শায়েস্তাগঞ্জ ওয়ার্কশপ এলাকায় এক অপরিচিত সন্দেহভাজন যুবককে পরিচয় জানতে চাইলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় এলাকার লোকজন তাকে দৌঁড়ে ধৃত করে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল এর কাছে নিয়ে যায়। ওই যুবকের কাছ থেকে ২টি ঔষধ জাতীয় পুতলা উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে দৈনিক জনকণ্ঠের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মামুন চৌধুরীর চাচার বাসার জানালা দিয়ে স্প্রে নিক্ষেপ করে আতংক তৈরি করে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি টের পেয়ে বাসার লোকজন চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ ছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ পূবালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার এনামুল হাসান চৌধুরীর বাসায় স্প্রে পার্টির সদস্যরা আক্রমণ করে। গতকাল শুক্রবার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ চুনারুঘাট উপজেলার ৭নং উবাহাটা ইউনিয়নের উবাহাটা গ্রামের চুনারুঘাট রোডে এস আর আবাসিক এলাকার ভাড়াটিয়া পূবালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার এনামুল হাসান চৌধুরীর বাসায় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে ওই পরিবারের ৬ জন অসুস্থ হন।
এনামুল হাসান চৌধুরীর স্ত্রী বলেন গতরাত সাড়ে ১০টার পরে রাতের খাবার শেষে আমার স্বামী বাসার বাহিরে টং দোকানে পান খাওয়ার জন্য বাহির হলে রাস্তায়ই তিনি অসুস্থতা বোধ করেন। এ অবস্থায়ই উনি বাসায় ফিরে আসেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি উনি কোন কিছু খেয়েছেন কি-না। উনি তখন না জবাব দিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।
উনার সাথে কথা বলা অবস্থায় আমি নিজেও অসুস্থতা অনুভব করতে থাকি। এরই মাঝে আমার ফ্যামেলির আরো চারজন অসুস্থতা অনুভব করে। তাৎক্ষণিক আমি আমার আত্মীয়দের বাসায় ফোন করলে তারা এসে আমাদেরকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সকালবেলা আমি চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবকে ব্যাপারটি অবগত করি। চেয়ারম্যান সাহেবের কথামত থানায় একটি ডায়েরিও করি।
এ ব্যাপারে ক্যাশিয়ার এনামুল হকের চাচা বলেন, চুনারুঘাট থানা পুলিশ আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে এসে তদন্ত করেছেন। তবে দারগা সাহেব বলেছেন সম্ভবত দুর্বৃত্তরা খাবারের সাথে কোন কিছু মিশিয়ে দিয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের আশ^াসে গতকাল মানববন্ধন স্বগিত করে নিলেও স্বস্থিতে নেই সাধারণ মানুষ। তারা বাসা বাড়িতে নিজ উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করেও স্প্রে পার্টির সদস্যদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন না। স্থানীয় পুলিশ বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ায় মানুষের মন থেকে এই আতংকটি দূর করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
একের পর এক এমন ঘটনার খবরে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করলেও স্থানীয় পুলিশ বলছে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কয়েকদিনের মধ্যে একই কায়দায় ১৫ থেকে ২০টি বাসায় স্প্রে নিক্ষেপ করে চুরির ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা চেষ্টা করেছে আরও অন্তত ২০টি বাড়িতে চুরি করার। কিন্তু এই অপরাধগুলো দমনে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের দাবি, একটি চক্র বাড়িগুলোতে চেতনানাশক ছিটানোর নামে গুজব ছড়াচ্ছে। চক্রটিকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পুলিশ এ কথা বললেও স্থানীয় জনতা বলছেন, শায়েস্তাগঞ্জে পুলিশের টহল তেমন একটা দেখা যায় না। কিংবা কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাও কার্যকর নেই। যে কারণে এমন ঘটনা বাড়ছে। পুলিশ এসব ঘটনাকে গুজব দাবি করলেও অপরাধ দমনে পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্প্রে পার্টির ভয়ে শায়েস্তাগঞ্জবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। শায়েস্তাগঞ্জের পরিস্থিতি অনেকটা ফুটে উঠেছে সাবেক পৌর কাউন্সিলর খায়রুল আলমের মন্তব্যে। তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেন- “সন্ধ্যা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত পৌরসভার প্রতিটি রাস্তায় ঘুরলাম, প্রতিটি বাড়ির সামনে পেছনে এবং রাস্তায় এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে পাহারা দিচ্ছেন তারপরেও আজ রাতে ৮টি ঘরে দুর্বৃত্তরা চেতনানাশক স্প্রে মেরেছে! স্প্রে মেরে দুর্বৃত্তরা চোখের পলকেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছে। স্প্রে ব্যবহৃত ঘরের শিশু ও নারী সহ মোট ৬ জন সদস্যকে অজ্ঞান অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চরম উদ্বেগজনক উৎকণ্ঠায় রাত কাটছে প্রতিটি নাগরিকের। সকলের একটাই প্রশ্ন এভাবে একটি এলাকা চলতে পারে না? আমার কাছে মনে হচ্ছে এই দুর্বৃত্তরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন একটি চক্র। কঠিন বিপদের মুখোমুখি আজ এলাকাবাসী। প্রশাসনসহ সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় জনগণ। মহান আল্লাহ পাক আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন।”