ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করতে পূর্ব বাগুনিপাড়ায় তার বাড়িতে পুলিশের অভিযান
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ধর্ষণে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মাঝে একজন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বাগুনিপাড়া গ্রামের শাহ বাড়ির বাসিন্দা শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার পুত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। সে বাগুনিপাড়া লায়ন ক্লাবের সভাপতি। তারা ৩ ভাই। রনি সবার বড়। তার পিতা পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জে শাহ রনি ক্লথ স্টোর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
রনি শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমী থেকে ২০১০ সালে এসএসএসি পাশ করে শাবিপ্রবিতে অনার্স সম্পন্ন করে এমসি কলেজে স্নাতকোত্তর করছে। পড়ালেখায় মেধাবী হলেও ছোটবেলা থেকেই সে ছিল উগ্র মেজাজের। এলাকায় এলে রনি ছাত্রলীগের প্রভাব দেখাতো। ঘটনার পর থেকে রনিসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার ওই যুবতীবধূ তার স্বামীর সাথে সিলেটের এমসি কলেজে ঘুরতে যান। ঘুরাফেরার এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে ওই যুবতীবধূর স্বামী সিগারেট কেনার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে যান। এসময় কয়েকজন যুবক ওই তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চায়। এতে তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধোর শুরু করে ওই যুবকরা। এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে তারা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যায়। সেখানে স্বামীকে বেঁধে রেখে এমসি কলেজ ছাত্রবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে ওই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে নরপশুরা। এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি কারও ছিনিয়ে নিয়ে যায় ধর্ষকরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে কারটি তাদের জিম্মায় নেয় এবং ধর্ষিতা তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে প্রেরণ করে।
এদিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে যুবতীবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুরসহ ৬ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী। শনিবার ভোরে তিনি শাহপরান থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় যে ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত। এর আগে শুক্রবার রাতে ছাত্রাবাসে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় সাইফুরের রুম থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি লম্বা দা, একটি ছুরি ও দুটি জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়। রাত ২টার দিকে নগরীর শাহপরাণ থানা পুলিশ এমসি কলেজের নতুন ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধর্ষকদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধ থাকলেও সাইফুর অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন। তিনি সহযোগীদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস, টিলাগড় ও বালুচর এলাকায় ছিনতাই, অপহরণ ও মাদক ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে বন্ধ ছাত্রাবাসে নিয়মিত জুয়া ও মাদকের আসর বসাতেন এমন অভিযোগও রয়েছে সাইফুরের বিরুদ্ধে।
এদিকে স্বামীর সাথে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী মানসিকভাবে আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন। তবে তাঁর শারীরিক কোনো ঝুঁকি আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন। ওই গৃহবধূ এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছেন। দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ওসিসিতে ওই গৃহবধূকে দেখতে যান।
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত শায়েস্তাগঞ্জের শাহ মাহবুবুর রহমান রনির বাড়ি নজরদারী করছে প্রশাসন। গতকাল রাতে রনির বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা তাকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িটি নজরদারী করছে। তবে রনি গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত আল-মামুন জানান, ঘটনাটি নিন্দনীয়। এটি জাতীয় ইস্যু। রনিকে গ্রেফতারের জন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে তল্লাসী চালিয়ে যাচ্ছি। তার বাড়িও নজরদারীতে রয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল তালুকদার জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত রনি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা। সে এ ধরণের ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে ছাত্রলীগ তথা এলাকাকে কলঙ্কিত করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। রনির এ ধরণের অপকর্মের জন্য তার নিজ গ্রামের মানুষ বিক্ষুব্ধ। তারা তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।