এম.এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহনওয়াজ মিলাদ এর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে কটুক্তিমুলক স্ট্যাটাস দেয়ায় ৩ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। গতকাল রাতে পুলিশ একজন কে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করেছে। আসামীরা সবাই আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মী বলে জানাগেছে।
জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর বাসিন্ধা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন। গত ১ মে রাত ১০টার দিকে এমপির ফেসবুক থেকে দেওয়া পোস্টটি শেয়ার করে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘রাতে ত্রাণ নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা বলে সকালেও পৌঁছেনি। দয়া করে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন। কল করুন খাবার পৌঁছে দিব বাড়িতে-এসব ভাওতাবাজি বন্ধ করুন। অসহায় হতদরিদ্রদের নিয়ে আর খেলা করবেন না, দয়া করে এসব বন্ধ করুন। ’ তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে জেলা উপজেলার অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেন।
গত ৩ মে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে এমপিকে নিয়ে কটুক্তিমুলক পোস্ট করেন নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর বাসিন্দা জনৈক যুবক গিয়াস উদ্দিন মামুন। তার পোস্টের কমেন্টেও নানা ধরনের মন্তব্য করে এলাকার লোকজন।
জকির ও গিয়াসের পোস্ট দুটি শেয়ার করেন উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লা রুহেল। এতে হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি মিলাদ গাজীকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। ফলে তিন যুবক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাকির হোসেন, হাবিবুল্লাহ রুহেলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়ের করেন সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহনওয়াজ মিলাদ এর কম্পিউটার অপারেটর অলিউডর রহমান ইমরান। এঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপর দুই আসামীকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। মামলার খবর নিশ্চিত করেন থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান। মামলা ও পুলিশ সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারী করোনায় সরকারের তরফে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার পর ব্যাক্তিগত ভাবে প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেন সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহনওয়াজ মিলাদ। পর্যাক্রমে দেয়া ওই সহয়তা নিয়ে অভিযুক্ত জাকির হোসেন ও তার সহযোগী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুল্লাহ রুহেল কটুক্তি মূলক পোষ্ট করেন।
আসামীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বৃহস্পতিবার আসামী মামুন, জকির ও গিয়াসের বিরুদ্ধে ডিজিটার নিরাপত্তা আইন ২০১৮’র ২৫(২)/২৯(১)/৩১(২)/৩৫ দ. বি. ধারায় মামলা দায়ের করেন এমপি মিলাদ গাজীর কম্পিউটার অপারেটর অলিউর রহমান ইমরান। সেদিনই গিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এঘটনায় সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহ নওয়াজ মিলাদ বলেন, নিজের সন্তানকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে ফেলে রেখে নির্বাচনী এলাকায় জনগণের পাশে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর নিকট পৌঁছে দেয়ার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করে নির্দেশনা দিচ্ছি। ব্যাক্তিগত ভাবে দিবারাত্রি সাধ্যমত সহায়তার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন সরকারে নির্দেশনা রয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে কেউ কোন কটুক্তিমুলক পোষ্ট করতে পারবেন না। পোষ্টকারীরা ত্রান কার্যক্রম নিয়ে কটুক্তিমুলক পোষ্ট করায় পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার জনগণও নানা সংকটে পড়েছেন। এ অবস্থায় আসনটির এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী) নিজে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।
পোস্টে এমপি লেখেন, ‘নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলার মধ্যবিত্ত যে সকল পরিবার খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে আছেন, অথচ লোকলজ্জার কারণে কারও কাছে কোনো সহযোগিতা চাইতে পারছেন না-তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমার সাথে (এমপি মিলাদ) যোগাযোগ বা ফোন করলে অতি গোপনে আপনার বাসা, বাড়িতে সহযোগিতা পৌঁছে যাবে।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন ও সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হাবিবুল্লাহ রুহেলের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান জানান, তিন যুবক স্থানীয় এমপির সাহেবের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মিথ্যা কটুক্তিমুলক স্ট্যাটাস দেওয়ায় সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একজনকে গ্রেপ্তার করে মামলা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।