মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব

আজ হতাশাগ্রস্ত ইতালি। পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম সভ্য এবং উন্নত দেশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিঃসন্দেহে নিজদেশকে সামলানোর মত সর্বত প্রস্তুতি তাদের ছিল যুগোপযোগী। সেই উন্নত এবং সভ্যদেশ আজ বৈশ্বিক মহামারি করোনায় পর্যুদস্ত। ধারণা করা হচ্ছে করোনা নির্ণয় এবং প্রচারে তাদের মাঝে কোন লুকোচুরি নেই। এবং একারণেই অতিমাত্রায় বয়স্কজন অধ্যুষিত ইতালি আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে বিশ্বে তালিকার শীর্ষে। এ সত্য প্রকাশ এবং মোকাবেলা অবশ্যই ত্বরিত সুফল বয়ে আনবে সন্দেহ নেই।
কিছুকিছু ব্যাপারে লুকোচুরি চলেনা, সত্য অকপটে প্রকাশ করতে হয়। নিজের স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে এবং জাতীয় স্বার্থে।
খলিফা হযরত উমর(রাঃ) বলেছিলেন, ‘যদি খাদ্যের অভাবে রাজ্যে একটা কুকুরও মারা যায় তাহলে পরম করুণাময়ের নিকট আমাকে জবাবদিহিতা করতে হবে।’
তাই বলছিলাম রাষ্ট্রীয় যেকোন দায়িত্বশীল পদে থেকে ইচ্ছাকৃত যেকোন লুকোচুরি, আংশিক বা পূর্ণ সত্য গোপন অথবা অবহেলা যদি মহাদুর্যোগ ডেকে আনে বা প্রাণহানি ঘটায় তার জবাবদিহিতা হযরত উমরের উক্তির মতই বলছি পরম করুণাময়ের নিকট অবশ্যই দিতে হবে। একসময় পুরো জাতির সম্মুখেও জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বৈ কি। আমাদের কোন ভুল সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপের কারণে যদি বিপুল প্রাণহানি ঘটে তা হবে গণহত্যারই সমতুল্য। এক কথায় জেনোসাইড, তথা করোনা জেনোসাইড। নিজ ত্রুটীর কারণে আমি বা আমরা হব তখন ঘাতক বা murderer. একজন শিশু বা নিরুপায় নাগরিক সিরিয়ান শিশুর মতই নিভৃতে বলবে ‘অবশ্যই আমি মৃত্যুর পর আল্লার কাছে বিচার দিব।’ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব হিসেবে ইহ ও পরকালে এর দায়বদ্ধতা এড়ানোর কোনই সুযোগ নেই।

যে কারণে বলছিলাম। যেকোনো জটিল রোগকে লুকিয়ে রাখলে একসময়ে তার খেসারত যেমন দিতে হয় ঠিক তেমনি বৈশ্বিক মহামারি করোনার ব্যাপারেও ধামাচাপা বা লুকোচুরির সুযোগ নেই। সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়। যেখানে বিশ্বর সকল স্বাস্থ্য ও মহামারি বিশেষজ্ঞগণ করোনার ব্যাপারে বলছেন, ‘ টেস্ট টেস্ট টেস্ট ‘ তার অবশ্যই বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে। আমরা যত পজিটিভ কেইস বের করে isolate বা পৃথক করতে পারব তাহলে বুলেট গতিতে প্রসারমান করেনার অগ্রগতি তত ত্বরিত রোধ করা সম্ভব। এটা মহামারি, প্রকৃতির ফসল, এতে মানুষের তেমন হাত নেই। উন্নত ও অন্যান্য সভ্য দেশের মতই সত্য স্বীকার ও প্রকাশ করে আমাদেরকে যথার্থভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। এখানে কোন কূটকৌশল বা লুকোচুরির প্রয়োজন নেই। ইতালি তার সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে একদিন অবশ্যই এ অসহায়ত্ব থেকে বেড়িয়ে আসবে। অবশ্য তাদের প্রাথমিক ভুলত্রুটির খেসারত থেকে আমাদেরও কিছুটা শিক্ষণীয় রয়েছে।
তাই আবারো বলছিলাম, একটা ছোট্ট ঘনবসতিপূর্ণ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই আজ ঝুঁকিতে রয়েছি। করোনা কিন্তু আশরাফ-আতরাফ, ধনী-গরীব, শুদ্র-কুলীন কাউকেই ছাড় দিবেনা। এমনকি রাজ পরিবারও যে নয় তা সর্বজন বিদীত।
সুতরাং কোন মহাবিপর্যয় ঘটে গেলে আমরা দায়িত্বশীল বা সাধারণ জনগণ কেউই এত্থেকে শংকামুক্ত নই। দ্বিতীয়ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নিরুপণ করতঃ উপযুক্ত চিকিৎসা প্রাপ্তি সকল জনসাধারণের নাগরিক অধিকার যার প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে অপ্রতুল।
অতএব জাতীয় স্বার্থে বিস্ফোরোন্মুখ করোনার প্রত্যেক পজেটিভ রোগীকে খোঁজে বের করে আইসোলেশন করতঃ আমাদেরকে সঠিক পথে এগোতে হবে। নচেৎ এর খেসারত অনিবার্য এবং মারাত্মক। সঠিক তথ্য প্রকাশ করে জন সচেতনতায় সহায়তা তৈরি ও তৎপরবর্তী পদক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের চিন্তা-চেতনা মোতাবেক বা বৈজ্ঞানিক পন্থায়ই কাম্য। নতুবা এর জবাবদিহিতার সম্মুখীন ইহ এবং পরকাল সর্বত্রই অবশ্যম্ভাবী। তাছাড়া নিজের বিবেক সেতো বড় আদালত, যার ভুলের অদৃশ্য নিভৃত নির্মম দহণ নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক, মর্মান্তিক।।