ধর্ম মা তাহমিনা চৌধুরী বললেন ঘাতকরা যখন সাইফুলকে মারছিল তখন তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার রহস্য এখনও উন্মোচন হয়নি। এদিকে সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেমঘটিত কারণে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার মূল নায়িকা যুবতীকে আটক করতে পারলেই রহস্য উদঘাটিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ এ হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচনে ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রেম সংক্রান্ত, আরেকটি হচ্ছে ব্লাড ব্যাংকে রক্ত সংক্রান্ত কথা কাটাকাটি এবং করোনার ভ্যাকসিন প্রদান সংক্রান্ত কারণ।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিবিসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা আশা করছেন অচিরেই এ হত্যার মোটিভ উদঘাটিত হবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে শহরের টাউন হল রোডে স্যামসং শো রুমের সামনে সাইফুলকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত।
জানা গেছে, সাইফুলের মা বাবা কেউই বেঁচে নেই। তিনি নবীগঞ্জের পুরানগাঁও গ্রামের তাহমিনা বেগম চৌধুরী নামের এক নারীকে ধর্ম মা ডেকেছেন। তার কন্যা নাঈমা চৌধুরীর সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে নবীগঞ্জের এক প্রবাসীর। সাইফুলের সাথে নাঈমার কথাবার্তার সূত্র ধরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে এবং তাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি ওই প্রবাসী জেনে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, হয়তবা এ কারণেও হত্যাকা-টি সংঘটিত হতে পারে।
নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে তাহমিনা বেগম চৌধুরী সদর হাসপাতালে করোনা টিকা নিতে আসেন। টিকা নেওয়া শেষে সাইফুল তাহমিনা বেগমকে বাড়ি পাঠাতে রিকশাযোগে নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শহরের টাউন হল এলাকার স্যামসাং শো-রুমের সামনে কয়েকজন যুবক তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে সাইফুল মারা যান।
সাইফুলের সাথে থাকা নারী তাহমিনা বেগম চৌধুরী বলেন, ‘দুপুরে দুই যুবক রক্ত দিতে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসে। এ সময় সাইফুলের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা সাইফুলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন- ‘সাইফুল আমাকে গাড়িতে তুলে দিতে রিকশা দিয়ে নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড (বর্তমান সিএনজি স্ট্যান্ড) উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। টাউনহল রোড এলাকার জুনিয়র হাই স্কুল এন্ড কলেজের রাস্তার প্রবেশমুখে রিকশা থেকে হঠাৎ তাকে টেনে নামায় এক যুবক। এ সময় পেছন থেকে আরও এক যুবক বড় একটি বাঁশ দিয়ে সাইফুলের মাথায় আঘাত করে। এরপর তারা সাইফুলকে মাটিতে ফেলে আবারও মারতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘যখন তারা সাইফুলকে মারছিল তখন সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। দুই যুবক সাইফুলকে মেরে চলে যাওয়ার পর লোকজন এসে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, এখনও মামলা করা হয়নি। তবুও পুলিশ দোষীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দাফন শেষে আজ বৃহস্পতিবার সাইফুলের ভাই এসে মামলা করবেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলী বলেন, ঘটনাস্থলের সিসি টিভির ফুটেজে হামলাকারীদের দেখা যাচ্ছে। পুলিশ সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই হামলাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।