মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাইফুল ইসলামকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ॥ ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) সাইফুল ইসলামকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হবিগঞ্জসহ পুরো সিলেট বিভাগজুড়ে ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সেবা ব্যতিত সব ধরণের সেবা প্রদান বন্ধ রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দেয়া হয়। এ সময় হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। অন্যথায় সিলেট বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে বিক্ষোভকারীদের সাথে একাত্মতা পোষন করতে তিনি সিলেট থেকে দুপুরে হবিগঞ্জ ছুটে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, দিনদুপুরে প্রকাশ্যে শহরের প্রধান সড়কে মানুষের সামনে এমন ঘটনায় আমরা হতভম্ব। তাকে যারা এভাবে দিনদুপুরে মেরেছে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড অত্যন্ত বর্বরোচিত এবং অমানবিক। মাত্র দেড় বছর আগে তিনি চাকরিতে যোগদান করেছেন। এরকম একটি তরতাজা ছেলেকে হত্যা করেছে। যে কোভিডের সময় জেলাবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে। সহযোগিতা করেছে। এরকম একটি হত্যাকান্ডের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অসন্তোষ প্রকাশ করছি। এখানে মানবতা প্রচন্ডরকমভাবে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আজ এ কর্মসূচি থেকে ঘোষণা করছি আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। এ সময় পর্যন্ত আমরা এ হাসপাতালে শুধু জরুরী সেবাগুলো চালু রাখবো। যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনিদের ধরতে ব্যর্থ হন তবে পুরো সিলেট বিভাগে সকল প্রকার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দেব। কারণ আমরা দেখছি পুরো বাংলাদেশ জুড়ে বার বার একই ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি নিরাপত্তা না পায় তবে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য আমরা আর অপেক্ষা করবো না। কোন জনগণকে আমরা স্বাস্থ্যসেবা দেব? আমরা যাদের সেবা দিয়ে করোনাকালীন সময়ে রক্ষা করেছি তাদের নিরাপত্তা থাকবে না। অথচ এককভাবে যাদের অবদান রয়েছে তারা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ বিভাগের কর্মীর প্রতি যদি এমন আচরণ জনগণের পক্ষ থেকে আসে তাহলে এই জনগণকে আমরা সেবা দিতে চাই না। এ ঘটনার যদি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না করা হয়, পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীর কর্মক্ষেত্র যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হয়, বাইরে যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হয় তাহলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে না।
স্বাস্থ্য বিভাগের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষন করতে এসে জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে এমন নির্মম ঘটনা আমাদের মারাত্মকভাবে মর্মাহত করেছে। এ ঘটনাটি কেউ মেনে নিতে পারেনি। সবার একটি প্রশ্ন, এমন নিরিহ একজনকে কেন এভাবে প্রাণ দিতে হলো। স্বাস্থ্য বিভাগের সবাই একত্রিত হয়ে অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে আন্দোলন শুরু করেছেন। আমি তাদের সকল আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সব আন্দোলনে তার সংগঠন পাশে থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা জানান, এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ইতিমধ্যে সিসিটিভি’র কিছু ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে। তিনি বলেন, কিছু তথ্য ইতিমধ্যে পেয়েছি। তদন্তও এগুচ্ছে। এ বিষয়ে এখনও মামলা হয়নি। তবে তা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে শহরের প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা টাউন হল রোডে হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সামনের রাস্তায় সদর আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাইফুল ইসলামের উপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। বাঁশের টুকরো দিয়ে তারা বেদম পিটায় তাকে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে এবং পরে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে তিনি সেখানে মারা যান। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। জেলা প্রশাসকের নিকট একটি স্মারকলিপিও দেয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় জরুরী সেবা ব্যতিত সদর আধুনিক হাসপাতালের অন্য সব কার্যক্রম। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজ কর্মস্থলে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় সেখানেই তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মাধবপুরের মনতলা-শিবনগর তার নিজ গ্রামে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী জানান, ঘটনার পর থেকে সাইফুল হত্যাকান্ডে জড়িতদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী শীঘ্রই ঘাতকের পরিচয় জানা যাবে এবং তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।