এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলখ্যাত দিনারপুর এলাকার রুকনপুরে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাহাড়ের লাল মাটি উচ্চ দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রুকনপুরে পাহাড় কাটার ঘটনায় একই পরিবারে ৪ ভাইসহ ১২ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। পানিউমদা ভূমি অফিসের তহসিলদার তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তাছাড়া অভিযানের সময় মাটি কাটার এক্সকেভেটর মেশিন আটক করা হয়। পরে তা মালিকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেনের নেতৃত্বে গত ৫ দিন ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছিল। নবীগঞ্জ উপজেলার রুকনপুরে পাহাড় কেটে মাটির রমরমা ব্যবসা করছে একটি অসাধু চক্র। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাতে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হয়। প্রতিদিন ৩/৪টি ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহন করে। ফলে এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে পড়ছে। এছাড়া পাহাড় কাটার মেশিনের শব্দ ও ট্রাক্টর চলাচলের শব্দে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। পাহাড় কাটার সরকারি কোন অনুমতি না থাকলেও দেদারছে মাটি উত্তোলন করছে ওই চক্রটি। স্থানীয়রা জানান, প্রতি গাড়ি মাটি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়।
গত বুধবার রাতে নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের রুকনপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রত্যয় হাশেমী। অভিযানকালে একটি মাটি কাটার মেশিন এক্সকেভেটর আটক করা হয়। পরে এক্সকেভেটরটি মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দিয়ে মাটিকাটার সাথে সম্পৃক্ত ৪ ভাইসহ ১২ জনকে আসামী করে নিয়মিত মামলার জন্য নবীগঞ্জ থানায় চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গভীর রাতে নবীগঞ্জ থানায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ এর ১৫(১) এর ১/১৫(১) এর ৮/১৫(১) এর ১২ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। মামলার আসামি হলেন, রুকনপুর গ্রামের মৃত মফিজ উল্লাহর ছেলে আলী হোসেন, আমির হোসেন, আবির হোসেন ও জাকির হোসেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, একই উপজেলার দিনারপুরে ও পার্শ্ববর্তী বাহুবল উপজেলার পুটিজুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাটি উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাটি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে ওই চক্রটি।
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ কামরুজ্জামান বলেন, নবীগঞ্জে টিলা থেকে মাটি উত্তোলনের ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তে সাপেক্ষে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রত্যয় হাশেমী বলেন, আমরা তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে অভিযান চালাই। এসময় কাউকে পাওয়া যায়নি। একটি মাটি কাটার মেশিন এক্সকেভেটর পাওয়া যায়। পরে তদন্ত করে জানি এই ঘটনার সাথে সরাসরি ৪ জন জড়িত আছেন। তাদের নাম উল্লেখ করে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করার জন্য নবীগঞ্জ থানায় চিঠি প্রেরণ করি। এর প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আমরা ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পাহাড় টিলা কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, মাটি কাটার এক্সকেভেটর মেশিনটি মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

