আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে মহিমায় সাজানো হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্য, পরীর বিল, শাপলা বিল, দমদমিয়া লেক, গ্রীণল্যান্ড পার্কসহ ২৩টি চা বাগানে নানা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলায় “সীতার হাওর লেক” নামে নতুন একটি পর্যটন কেন্দ্র সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চা বাগানের এই সীতার হাওর লেকে হাজার হাজার পর্যটক আসছেন।
সম্প্রতি উপজেলার রানীগাও ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হারুনুর রশীদ সীতার হাওর লেকের একটি ভিডিও ধারণ করে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড দিলে এটি ভাইরাল হয়। চুনারুঘাটের নতুন ট্রেন্ড হয় রানীগাও ইউনিয়নের পারকুল চা বাগানের ফাঁড়ি নাসিমাবাদ চা বাগানের সীতার হাওর লেক। প্রতিদিন সেখানে যাচ্ছেন হাজার হাজার ভ্রমন পিপাসু মানুষ। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার হলেই হাজারো মানুষের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠে এ লেক ও চা বাগানের উচুনিচু টিলা। প্রকৃতি যেন সব সুন্দর সেখানেই দিয়ে রেখেছেন এমনটাই বলছেন ঘুরতে আসা নারী পুরুষ পর্যটকরা।
উপজেলার চা বাগানের অভ্যান্তরে পরীর বিল, শাপল বিল, দমদমিয়া লেক, রামগঙ্গা পর্যটন কেন্দ্রের পরেই এখন মানুষের আগ্রহ সীতার হাওর লেকে। হারুনুর রশীদ জানান, তার নিজের ইউনিয়নের চা বাগানে বাড়ির কাছে এত সুন্দর জায়গা আছে জানা ছিল না। সম্প্রতি তিনি বিকেলে ঘুরতে যান চা বাগানে। চা বাগানের পাশেই রয়েছে সীতার হাওর। সীতার হাওরের পাশেই চা বাগানে অভ্যন্তরে উচু নিচু টিলার মধ্যে সুন্দর লেক। সীতার হাওরের পাশেই এ লেকের অবস্থান এজন্য একে সীতার হাওরের লেক নামে অভিহিত করা হয়। তিনি সেদিন নিজের ক্যামেরায় লেকের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড দিতেই তা ভাইরাল হয়। লেকে শুরু হয় মানুষের আগমন। এরই মধ্যে জেলা ও জেলার বাইরের ইউটুবার ও টিকটকাররা এসে এটি ভাইরাল করেন। গত শুক্রবার বিকেলে লেকে গেলে দেখা যায় চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। ভ্রমনপিপাশুরা ভিড় করেছেন চা বাগানের টিলা ও লেকের পাড়ে। অনেকেই তপ্ত দুপুরে লেকে নেমে গোসল করছেন। সাতার কাটছেন।
এরই মধ্যে লেকের পাড়ে বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। এসেছে ঘোড়াও। ঘোড়ায় চড়েও মানুষ আনন্দ পায়। তবে গত কয়েকদিনেই লেকের পাড় এলাকায় ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। যে যেভাবে পারছে কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়ার পর ময়লা আবর্জনা লেকের পাড়ে ও টিলায় ফেলে আসছেন। তবে স্থানীয় কিছু ভলান্টারি গ্রুপ এসব ময়লা আবর্জনা পরিস্কারও করছেন। দোকানীদের নিজেদের ময়লা আবর্জনা নিজেরাই পরিস্কার করার সচেতনতাও চালাচ্ছেন কেউ কেউ। দোকানপাট নির্ধারিত জায়গায় নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
চুনারুঘাট উপজেলা থেকে রানীগাও বাজার পারকুল হয়ে যাওয়া যায় এই লেকে। এছাড়া মিরাশী নতুন বাজার হয়ে আতিকপুর হয়েও যাওয়া যায় এই লেকে। এদিকে হাজার হাজার মানুষের আগমনে বাগান কর্তৃপক্ষ পড়েছে বিপাকে। তারা বাগানের অভ্যন্তরে এমন পর্যটন চালুতে অনিহা প্রকাশ করছেন। এতে চা বাগানের ক্ষতির আশংকার কথাও তারা বলছেন। তারা লেকে যেতে বারণও করছেন।
প্রথমবার লেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্যেন্দ্র দেব জানান, লেকটি অনেক সুন্দর। চা বাগানের ভেতরে কাছেই সুন্দর জায়গা দেখতে পেরে তিনি খুশি। তবে দুর্গম হওয়ার কারণে এতদিন মানুষ সুন্দর এ লেকের কথা মানুষ জানতে পারেনি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সবুজ বন মানুষের পদচারণায় সাদা হতে শুরু করেছে। দোকানপাট বসেছে, মানুষের তৈরী ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে গেছে লেকের পাড়। তিনি বলেন, অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব পর্যটন না হলে বেশিদিন এ পর্যটন কেন্দ্রে মানুষ আসবে না।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বাহুবলের আবু তাহের বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো ভাল হলে আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে। পরিবার পরিজন নিয়েও মানুষ আসবে। তবে তিনি লেকের চারপাশের ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন পরিস্কার ও দোকানীসহ পর্যটকদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।